কল কেটে ঠোঁটের কোণে পৈচাশিক হাসি হেসে পরের শিকারের অপেক্ষায় রয়েছে মাইশা। একই ভাবে বাকি দুই জনকেও কল করে একেক জন কে একেক টাইমে ডেকে নেয় সে। পরদিন ঠিক সময় হোটেলে পৌঁছে গেলো বোরহান।
"_হ্যালো মিস, এই হোটেলে পাঁচ তলায় মাইশা নামের কোনো মেয়ে কী রুম বুক করেছে?
রিসিভার কে জিজ্ঞেস করে বোরহান কাঁচুমাচু হয়ে দাঁড়ালো।
"_জ্বী স্যার উঠেছে তো।
রিসিভার রুম টা দেখিয়ে নিজ পথে পা বাড়ালো। বোরহানের চোখে মুখে আনন্দের ঝলকানি। দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই অন্ধকারে নিজেকে হারিয়ে ফেলে সে। এদিক সেদিক কাউকে দেখা যাচ্ছে না।
"_ মিস মাইশা! আছেন কী রুমে?
না এখনো কোনো সাড়া নেই। বোরহান খানিক ঘাবড়ে গেলো । কাঁপা পদক্ষেপে রুমের ভিতরে প্রবেশ করে। লাইট জ্বালানোর জন্য ইলেকট্রিক বোর্ড খুঁজতে থাকে সে। কিন্তু সুইচ গুলো কাজ করছে না। মোবাইলের টর্চ জ্বেলে সামনে এগোতে থাকে বোরহান।
তবে কী কেউ তাকে ফাঁসিয়ে নিয়ে এসেছে এখানে। নানান প্রশ্ন বাসা বেঁধেছে বোরহানের মনে।
"_আসুন আপনারি অপেক্ষায় ছিলাম।
ভরাট কন্ঠে চমকে উঠে বোরহান । মেয়ে কন্ঠ এত মোটা হয় কিভাবে? তবুও মানুষের আভাস পেয়ে কিছুটা স্বস্তি বোধ করছে বোরহান।
"_কই আপনি? আপনাকে দেখতে পাচ্ছি না কেনো?
কাঁপা কাঁপা গলায় বলে যাচ্ছে বোরহান।
"_সামনের দিকে আসুন।
বোরহান ধীর পায়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ পেছনে কারো স্পর্শ অনুভব করে সে। নরম হাতের ছোঁয়া পেয়েই সাড়া শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যায় বোরহানের। মোবাইল বিছানার এক পাশে রেখে বুকে টেনে নেয় মাইশাকে। দু'জনে অনেক কাছে চলে এসেছে। বোরহান কে জোর ধাক্কায় বিছানায় ফেলে দেয় মাইশা । বোরহানের খুশি যেনো ধরছে না।
মাইশা কে কাছা পাবার তীব্র ইচ্ছা তার ভিতর। কিন্তু ঘোর কাটতেই বোরহান খেয়াল করে বিছানা ভিজে গেছে। তার পাশে দুটো মানুষ উপুড় হয়ে পড়ে আছে। চোখ ডোলে ভালো মত দেখে নেয় সে। মেয়েটার দিকে তাকাতেই দেখে সে দা হাতে দাঁড়িয়ে আছে। আবছা আলোয় বেশ ভালোই বুঝা যাচ্ছিলো ।
"_কী করছো তুমি? তোমার হাতে দা কেনো ?
বেশ ঘাবড়ে গেছে বোরহান। উঠে দাঁড়াতে ভুলে গেছে সে। হঠাৎ একনাগাড়ে দা দিয়ে কু'পিয়ে জ,খম করতে থাকে মাইশা।
বোরহানের পুরো শরীর র'ক্তে র'ঞ্জিত হয়েছে। অন্ধকার ঘর আলোকিত হয়ে গেছে। সামনেই ফ্রেমে বাঁধানো মাইশার আগের রূপ অর্থাৎ মিতুর ছবি। বোরহান বেশ ভালো বুঝতে পেরেছে কেনো এই পরিস্থিতি হলো তার। শেষ চেষ্টা হিসেবে হাত জোর করে প্রান ভিক্ষা চাইতে লাগলো সে। কিন্তু মাইশা রূপী মিতু পিছ পা হতে নারাজ। একনাগাড়ে কুপিয়ে যাচ্ছে বোরহান কে।
হঠাৎ কেউ মিতুর নাম ধরে ডেকে উঠে।
_মিতু !
মিতু বুঝতে পারে তাকে কে ডাকছে। এই কন্ঠ যে তার বরই চেনা।
"_সবুর !
মুখে আনন্দের হাসি হেসে এদিক সেদিক খুঁজতে থাকে মিতু। কিন্তু কোথাও যে দেখা মিলছে না সবুরের।
সবুর যে তাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেছে। র'ক্তমা'খা শরীরে লা'শ তিনটি পাশে নিয়ে বসে আছে সে।
ফিসফিসিয়ে একনাগাড়ে সবুর সবুর বলে যাচ্ছে। সবুরের কাছে যেতে বড়ই ইচ্ছে করছে যে তার। এই কল'ঙ্কিত জিবনের মুক্তি দিতে চায় সে। আর পারছে না যে এই কলঙ্ক বয়ে বেড়াতে।
বেলকুনি থেকে শহরটা বেশ ভালোই দেখা যায়। এই শহরের মানুষ জন বড়ই স্বার্থপর। এখানে তাঁর কোনো মূল্য নেই। তবে কী লাভ বেঁচে। খোলা বেলকুনি তে দাঁড়িয়ে ছোট বেলার কথা মনে করে সে।
বাবা মা বেঁচে থাকতে কত সুন্দর ছিলো জিবনটা। একটা ঝড়েই জিবনটা বরবাদ হয়ে গেছে যে তার ।
মাটির দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসে মিতু। এই মাটিটাও যে তাকে বাঁচায় নি সে দিন।
পৃথিবীর সব কিছুই স্বার্থপর।
এক পা দু পা করে এগিয়ে যাচ্ছে মিতু। শেষ বারের মত পৃথিবীটা দেখে নেই সে। নিজের ফর্সা হাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। সে তো খুনি।
চোখ বন্ধ করে ঝাপিয়ে পড়ে বেলকুনি থেকে।
শেষ পর্যন্ত নিঃশ্বাস টাও বেঈমানি করলো তার সাথে। সেও ছেড়ে গেলো তাকে ছেড়ে।
সেও বাঁচতে চেয়েছিলো দশ পাঁচ টা মেয়ের মত। কিন্তু পৃথিবী যে তাকে মেনে নিতে পারে নি।
লেখকঃ আরিফ ইসলাম (সংগৃহীত)
সমাপ্ত
0 Comments:
Note: Only a member of this blog may post a comment.