ভালো শেয়ার চেনার উপায় এবং শেয়ার কেনার আগে কি কি বিষয় জানা অত্যন্ত জরুরী? শেয়ার বাজার বিনিয়োগের জন্য একটি আকর্ষণীয় জায়গা। সঠিকভাবে বিনিয়োগ করতে পারলে এখান থেকে ভালো মুনাফা পাওয়া সম্ভব। কিন্তু বিনিয়োগে ভুল হলে পুঁজি হারানোর আশঙ্কা থাকে। যদিও শেয়ারে বিনিয়োগের ঝুঁকি শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব নয়। তবে জেনে বুঝে সঠিক কৌশলে বিনিয়োগ করতে পারলে ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ থেকে ভালো সাফল্য পেতে হলে শেয়ার কেনার আগে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া অত্যন্ত জরুরী। হুজুগে বা গুঁজবে শেয়ার কিনে কখনওই আপনি কোন শেয়ার কিনে লাভ করতে পারবেন না।
সুপ্রিয় দর্শক। স্টক মার্কেট ভার্সেস বন্ড চ্যানেলের ফলোয়ার এবং শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগে আগ্রহী নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য দেশ বিদেশের বিশেষজ্ঞ ও সফল বিনিয়োগকারীদের অভিজ্ঞতার আলোকে আজকের এই পোস্ট। তবে সর্ট-টার্ম ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে এই ভিডিওটি হয়তো তেমন কাজে দিবেনা। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই ভিডিওটি অবশ্যই কাজে দিবে বলে আমি মনে করি।
একটি শেয়ার কেনার আগে প্রথম যে জিনিষটি আপনাকে দেখতে হবে সেটি হচ্ছে শেয়ারটির পিই রেশিও।
শেয়ারটির পিই রেশিও : মূল্য-আয় অনুপাত বা পিই রেশিও হচ্ছে একটি কোম্পানির শেয়ার তার আয়ের কতগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে তার একটি পরিমাপ। কোনো কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় যদি হয় ৫ টাকা,আর বাজারে শেয়ারটির দাম থাকে ৪৫ টাকা,তাহলে মূল্য-আয় অনুপাত হবে ৯। এর অর্থ কোম্পানিটি যদি তার আয়ের পুরোটা লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করে দেয় তাহলে বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত পেতে ৯ বছর সময় লাগবে। কিন্তু শেয়ারটির বাজার মূল্য যদি হতো ১০০ টাকা, তাহলে মূল্য-আয় অনুপাত বা পিই রেশিও দাঁড়াতো ২০। অর্থাৎ কোম্পানির আয়ের ধারা অপরিবর্তিত থাকলে বিনিয়োগ ফেরতে ২০ বছর সময় প্রয়োজন।
তবে পিই অনেকটা আপেক্ষিক। উচ্চ প্রবৃদ্ধিসম্পন্ন কোম্পানির ক্ষেত্রে শেয়ারের পিই রেশিও একটু বেশি হলেও সেই শেয়ারে বিনিয়োগে তেমন ঝুঁকি থাকে না। অন্যদিকে কোম্পানির মুনাফা ও ব্যবসার প্রবৃদ্ধি যদি হয় নিম্নমুখী তাহলে পিই রেশিও কম হলেও তাতে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ।
শেয়ার প্রতি আয় (EPS) : শেয়ার প্রতি আয় বা ইপিএস (Earning Per Share-EPS) হচ্ছে শেয়ারের ভাল-মন্দ বুঝার অন্যতম প্রধান ফ্যাক্টর। একটি কোম্পানির নিট মুনাফাকে ওই কোম্পানির মোট শেয়ার | সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে শেয়ার প্রতি আয় বা ইপিএস। এটা যত বেশি হয়, ততই ভালো। কারণ ইপিএস বেশি হলে বেশি লভ্যাংশ দেওয়ার সুযোগ থাকে। ইপিএস কম হলে লভ্যাংশে সক্ষমতাও কম হয় ।
প্রতিটি কোম্পানি হিসাববছর শেষ হওয়ার পর ১২০ দিনের মধ্যে ওই বছরের অডিটেড আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ইপিএস প্রকাশ করে থাকে, যা স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটেও প্রকাশিত হয়। এছাড়া প্রতি প্রান্তিক শেষেও কোম্পানিগুলো ইপিএস প্রকাশ করে থাকে, যদিও তা আন-অডিটেড আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে করা হয়। এই প্রান্তিক প্রতিবেদনের ইপিএস পর্যালোচনা করে বছর শেষে কোম্পানির ইপিএস কত হতে পারে সে সম্পর্কে একটি ধারণা করা সম্ভব। তবে কোনো কোনো কোম্পানি আছে, যেগুলো নির্ভরযোগ্য নয়-সেগুলোর ক্ষেত্রে একটু সতর্ক থাকা ভাল
শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (NAVPS ) : কোন শেয়ার কেনার আগে সেই শেয়ারের Net Asset Value কত তা দেখে নিবেন। এর সাথে বাজারমূল্যের একটা সামঞ্জস্য থাকা উচিত। যদিও কোম্পানির অবসায়ন (বিলুপ্তি) না হলে সম্পদ মূল্যে বিনিয়োগকারীর কার্যত কিছু যায় আসে না। কোম্পানির অবসায়ন হলেই কেবল শেয়ারহোল্ডাররা ওই সম্পদের কিছুটা ভাগ পেতে পারেন। এক্ষেত্রেও সম্পদ বিক্রির মূল্য থেকে আগে ব্যাংক ঋণ এবং অন্যান্য পাওনা পরিশোধ করা হয়। এরপর কিছু অবশিষ্ট থাকলে তা শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয় ।
এনএভি ভাল থাকলে ওই শেয়ারে বিনিয়োগ করতে অনেকেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তাই ভবিষ্যতে আপনার শেয়ার বিক্রি করতে সুবিধা হবে যদি ভাল এনএভি সম্পন্ন শেয়ারে বিনিয়োগ করেন। বিশেষ করে ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানির শেয়ার কেনার আগে এটা ভালো করে দেখে নিবেন।
শেয়ারের সংখ্যা : শেয়ার কেনার আগে সেই কোম্পানির মোট শেয়ারের সংখ্যা দেখুন। আর দেখুন তার কতটুকু ফ্লোটিং। চাহিদা-যোগানের সূত্র অনুসারে শেয়ার সংখ্যা কম হলে তার মূল্য বাড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
অন্যদিকে শেয়ার সংখ্যা বেশি হলে বাজারে তা অনেক বেশি সহজলভ্য হয় । এছাড়া নিয়মিত ভালো অঙ্কের লেনদেন হয় এমন শেয়ার কেনা ভালো। কারণ কোনো কারণে জরুরী ভিত্তিতে টাকার প্রয়োজন হলে সহজেই শেয়ার বিক্রি করে টাকা সংগ্রহ করা সম্ভব। কিন্তু নিয়মিত লেনদেন হয় না এমন শেয়ারে বিনিয়োগ করা হলে জরুরিভিত্তিতে বিনিয়োগ প্রত্যাহার সম্ভব নয়।
অনুমোদিত মূলধন : অনুমোদিত মূলধন (authorized capital) আর পরিশোধিত মূলধন (paid-up capital) এর রেশিও দেখুন। এই দুই মূলধনের পরিমাণ কাছাকাছি থাকলে বোনাস ও রাইট শেয়ার ইস্যু করা বেশ কঠিন। এ ক্ষেত্রে কোম্পানিকে আগে অনুমোদিত মূলধন বাড়াতে হবে। বোনাস লভ্যাংশে যেসব বিনিয়োগকারীর বিশেষ ঝোঁক রয়েছে তাদের উচিত এসব বিষয় দেখা নেওয়া।
ডিভিডেন্ড ঈল্ড : শেয়ারের বাজার মূল্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফেস ভ্যালুর চেয়ে বেশি হতে পারে। তাই লভ্যাংশের হার প্রকৃত রিটার্ন নির্দেশ করে না। ডিভিডেন্ড ঈল্ডই শেয়ারের সঠিক রিটার্ন। বাজার মূল্যের ভিত্তিতে প্রাপ্য লভ্যাংশ বিনিয়োগের কত শতাংশ তা-ই হচ্ছে ডিভিডেন্ড ইল্ড। ঘোষিত লভ্যাংশকে ১০০ দিয়ে গুণ করে সংশ্লিষ্ট শেয়ারের বাজার মূল্য দিয়ে ভাগ করলে ডিভিডেন্ড ইল্ড পাওয়া যায়। এ ইল্ড যত বেশি হবে বিনিয়োগকারীর প্রাপ্তিও তত বাড়বে। তাই অবশ্যই শেয়ার কেনার আগে ডিভিডেন্ড ইল্ড দেখে নিবেন ।
ট্র্যাক রেকর্ড : কোন শেয়ার কেনার আগে সেই কোম্পানির গত ৪-৫ বছরের ট্র্যাক
রেকর্ড দেখুন । কী পরিমাণ ডিভিডেন্ড দেয় তা দেখুন। বার্ষিক গড় মূল্য দেখুন । চেষ্টা করবেন এই মূল্যের কাছাকাছি দামে শেয়ার কেনার ।
কোম্পানি ও সেক্টরের খবর : ডিএসইর সাইটে প্রকাশিত গত ৫-৬ মাসের খবর দেখুন। পত্র-পত্রিকায় দেশ-বিদেশের অর্থনীতি ও ব্যবসার সংবাদগুলো দেখুন। তাহলে সম্ভাবনাময় খাত ও কোম্পানি চিহ্নিত করা অনেক সহজ হবে।
কোম্পানি ও পরিচালকদের গুডউইল : আপনি যে কোম্পানির শেয়ার কিনবেন সে কোম্পানির গুড উইল ও তার পরিচালকদের সামাজিক ও রাজনৈতিক দিকটাও বিবেচনায় নিতে হবে। একটি কোম্পানি কতটুকু ভালো ব্যবসা করবে, ব্যবসার সম্প্রসারণের সম্ভাবনা কতটুকু তা নির্ভর করে এর উদ্যোক্তাদের দূরদর্শীতা, দক্ষতা ও আন্তরিকতার উপর। একইভাবে মুনাফার সবটুকু হিসাবে অন্তর্ভূক্ত করা হবে কি-না, লভ্যাংশের ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় রক্ষণশীল হবে, না-কি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিশেষ বিবেচনায় নেওয়া হবে তাও নির্ভর করে তাদের উপর।
মনে রাখতে হবে, বিক্রির সময় নয়, বরং কেনার সময়ই লাভের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ ভালো দামে শেয়ার কিনতে পারলে ভালো লাভের সম্ভাবনা বেশি থাকবে। কেনার সময় দাম বেশি পড়ে গেলে লাভের সম্ভাবনা একটু হলেও কমে আসবে।
0 Comments:
Note: Only a member of this blog may post a comment.