চার বছরের সংসার ইতি টেনে বাধ্য হয়ে ডিভোর্স দিতে হয়েছিল আমার স্ত্রীকে। ওর দোষ দিচ্ছি না,হয়তো আমার ভাগ্যটাই খারাপ ছিল। এই চার বছরে আমার বউয়ের মন জয় করার জন্য আমি কোনো চেষ্টাই বাদ রাখিনি। তবুও সফল হতে পারিনি। কত ভালোবাসতাম,কেয়ার করতাম!ও অসুস্থ হলে আমি টেনশনে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারতাম না,মাঝরাতে উঠে উঠে শরীরের অবস্থা জানার চেষ্টা করতাম। নিজের চেয়ে ওকে বেশি ভালোবাসতাম।
এর প্রতিদানে পেতাম অবহেলা,ঘৃণা আর খারাপ ব্যবহার। কাছে যেতে দিত না, যদিও এসব সবার সামনে করত না।রুমে বা ফোনে করত। ওর শরীর আমার কাছে থাকলেও ওর মনটা সারাক্ষণ ওর এক্স বয়ফ্রেন্ডের কাছেই পড়ে থাকত। ফলে ওর এক্সের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। অনেকবার হাতেনাতে ধরেছি, কান্নাকাটি করে ক্ষমা চেয়েছে আমি বারবার ক্ষমাও করেছি। তবুও কোনো পরিবর্তন আসেনি। আশ্বাস দিত,আর কখনো এমন হবে না,কিন্তু গোপনে ঠিকই তাদের যোগাযোগ চলতেই থাকত।
এক সময় সহ্য করতে না পেরে ওর এক্স-বয়ফ্রেন্ডকে রাস্তায় ধরে ওদের চ্যাটের কিছু স্ক্রিনশট দেখিয়ে বললাম,তুই কী চাস বল?সে বলল,আমার সঙ্গে বেয়াদবি করিস না,এর পরিণাম কিন্তু খুব ভয়াবহ হবে।আমি হেসে বললাম,কি করবি ভাই তুই?তখন সে বলল,আমার গায়ে হাত তুললে তোর বউ তোকেই খু করবে!এসব শুনে আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলাম না,রাস্তায় তাকে ইচ্ছেমতো পেটালাম।
ঘটনাটা আমার বউয়ের কানে যেতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে। আমার দুইটা নিষ্পাপ বাচ্চা বাসায় রেখে ও একা চলে যায় ওর বাপের বাড়ি।জোর করে আটকানোর অনেক চেষ্টা করেছিলাম,কিন্তু ওর প্রচণ্ড গালাগালির কাছে হেরে গিয়ে যেতে দিই। ওর যাওয়ার পর জানিয়ে দেয়- সে আর কখনোই আমার সংসার করবে না।অবশেষে, বিদেশ যাওয়ার আগেই ডিভোর্স লেটার আর কাবিনের টাকা পাঠিয়ে দিই।
যেদিন ডিভোর্স পেপারে সাইন করেছিলাম, মনে হচ্ছিল কেউ যেন,আমার কলিজাটা ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমার ডিভোর্স লেটার পাওয়ার তিন দিনের মাথায় সে তিন মাস ইদ্দত পালন করবে তো দূরের কথা দুই দিন পরই রাতে তার এক্স-বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে পালিয়ে যায়।
এর দেড় মাস পর, তাদের এক সাধারণ কথা কাটাকাটির কারণে তার সেই এক্স বয়ফ্রেন্ড তাকে নাকি তাকে খুবই নির্মমভাবে মারধর করে। এমনভাবে মারে যে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়।কোমর ও কোমরের নিচে কয়েকটি লা থি মারার ফলে কিডনিতে গু*রু*তর আ&ঘাত পায়। এর ফলে প্রস্রাবে রক্ত দেখা দেয়, ICU-তেও ভর্তি করাতে হয় পরে জরুরি ভিত্তিতে অপারেশন করতে হয়।
যাকে আমি আমার ৪ বছরের সংসার জীবনে রাগের মাথায় একটা চড়ও মারিনি,তাকেই এমনভাবে মারার কথা শুনে আমি কান্নায় ভেঙে পড়ি। বুকটা ফেটে যাচ্ছিল যেন। কী পরিমাণ কষ্ট পেয়েছিলাম,তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
এই ঘটনার এখন তিন বছর দুই মাস হয়ে গেছে। আমার প্রথম স্ত্রী আবার ফিরে আসতে চাইছে। এখন খুব ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে, কথায় কথায় কেঁদে ফেলে। বলেছি,তুমি অন্য কোথাও বিয়ে করো, আমি আর মেনে নিতে পারব না।তখন ও কান্নায় ভেঙে পড়ে,বলছে, প্লিজ কলিজার টুকরা, এভাবে বলো না। তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছি না। খাওয়া ঘুম সবকিছুতেই তোমার কথা মনে পড়ে। আরেকবার সুযোগ দাও, পৃথিবীর সেরা স্ত্রী হয়ে দেখাবো। ভবিষ্যতে যদি আবার এমন ভুল করি, তুমি নিজ হাতে মেরে ফেলো, কিন্তু ডিভোর্স দিও না।
এভাবে আরো অনেকভাবে কান্নাকাটি করে, ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে।
সমস্যা হচ্ছে আমি এখন বিবাহিত। আমার দ্বিতীয় বউটা বর্তমান অন্তঃসত্ত্বা। তার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই সেই আমাকে সবসময়ই হাসিখুশিতে রাখার চেষ্টা করে। সে আমার জন্য একদম পারফেক্ট। দুই সন্তানের বাবা হওয়া সত্ত্বেও সে অবিবাহিত হওয়ার পরও যেভাবে আমাকে মেনে নিয়েছে, আমি সত্যিই অবাক হয়েছিলাম। তাকে কিছুতেই কষ্ট দিতে চাই না। কিন্তু প্রথম স্ত্রীর কষ্টটাও সহ্য করতে পারছি না।
কিন্তু আমার বর্তমান স্ত্রীর তো কোনো দোষ নেই, তাকেই বা কেন কষ্ট দিব?সব মিলিয়ে আমি এখন এক হযবরল অবস্থায় আছি।
আমি এখন কী করব?আমার প্রথম স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনা কি ঠিক হবে?সে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবেও আসতে রাজি, বলছে তোমার শুধু আগের মতো একটু ভালোবাসা চাই, আর কিছু নয়।
লেখকঃ (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক )
নোটঃ প্রিয় পাঠক, আপনারা চাইলে আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে পারেন।
আমাদের মেইল করুন এই ইমেইলে : [email protected]
0 Comments:
Note: Only a member of this blog may post a comment.