Friday, April 18, 2025

শেয়ার বাজার, সঞ্চয়পত্র নাকি ট্রেজারি বন্ড, কোথায় ইনভেস্ট করলে বেশি লাভ

মানুষের কাছে যখন সঞ্চিত অর্থ থাকে তখন তার নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য বিভিন্ন মাধ্যম খুঁজে থাকেন। ভাল মুনাফার পাশাপাশি টাকার নিরাপত্তার বিষয়টি মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়। সাম্প্রতিক সময়ে নিরাপদে টাকা রাখার প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি করে টের পেয়েছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু কোথায় টাকা রাখলে আপনি সবচেয়ে বেশি মুনাফা পাবেন? পাশাপাশি টাকাও নিরাপদ থাকবে। সঞ্চয়পত্রের চেয়েও বেশি মুনাফা কোথায় টাকা রাখলে? কীভাবে টাকা বিনিয়োগ করা যায় ট্রেজারি বন্ডে। 

শেয়ার বাজার, সঞ্চয়পত্র নাকি ট্রেজারি বন্ড, কোথায় ইনভেস্ট করলে বেশি লাভ


বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত নিরাপদে টাকা রাখার সবচেয়ে প্রধান উপায় হচ্ছে ভালো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। তবে টাকা রাখার সবচেয়ে নিরাপদ মাধ্যম হচ্ছে সঞ্চয়পত্র ও ট্রেজারি বন্ড। যেহেতু সরকার নিজেই দুটি সিকিউরিটিজ ইস্যু করে, তাই সরকার দেউলিয়া না হওয়া পর্যন্ত এখানে কোনো ধরনের ঝুঁকি নেই বললেই চলে৷  


সরকার দেশের উন্নয়নমূলক কাজ ও বার্ষিক পরিচালনা ব্যয় নির্বাহের জন্য ট্রেজারি বন্ড ইস্যু করে টাকা তোলে এটা এক ধরনের ঋণ যার বিপরীতে সরকার সুদ প্রদান করে। বর্তমানে সাধারণত ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ ও নিশ্চিত সুদের আশায় বন্ড কেনেন। তবে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও বন্ড কিনতে পারেন সর্বনিম্ন ১,০০,০০ থাকলেই মানুষ ট্রেজারি বন্ড কিনতে পারবেন এবং লাভবান হতে পারবেন। আর সুদের হারও মুনাফা বিবেচনায় এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে বেশি লাভজনক । ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা সর্ব শেষ হিসাব অনুযায়ী দুই বছর মেয়াদে ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার ১২.২০% । ৫, ১০, ১৫ এবং ২০ বছর মেয়াদী বন্ড রয়েছে।  যত বেশি সময়ের জন্য টাকা বিনিয়োগ করা হবে, সুদের হারও তত বেশি। সর্বোচ্চ ২০ বছর মেয়াদী ট্রেজারি বন্ড কেনা হলে সুদের হার ১২ দশমিক ৬৫%। অথচ সঞ্চয়পত্রে সুদের হার ১১%। আর ভালো ব্যাংকগুলো তাদের আমানতের সুদ দিচ্ছে গড়ে ১১ শতাংশের মতো। 


অনেকেই বিনিয়োগের জন্য শেয়ার বাজারকে পছন্দ করেন। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করলে কখনও কখনও ভালো মুনাফা করার সুযোগ থাকে। তবে শেয়ারের দাম কমে গেলে লোকসানের ভয় রয়েছে। কেউ কেউ নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে স্বর্নকে নির্বাচন করেন। সাধারণত সোনায় বিনিয়োগ করলে দাম কমার ভয় খুবই কম থাকে। কিন্তু সোনায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটি বড় ঝুঁকি থাকে। সেটি হলো চোর ডাকাত থেকে সেটিকে রক্ষা করা সব মিলিয়ে ট্রেজারি বন্ড হচ্ছে ঝুঁকিমুক্ত এবং সর্বোচ্চ সুদ দেওয়া একটি ইনস্ট্রুমেন্ট। যেটি সঞ্চয়পত্রের চেয়েও অনেক বেশি হারে সুদ অফার করছে। কিন্তু অনেকেই সম্পর্কে খোঁজ খবর না রাখার কারণে তাঁরা হয় সঞ্চয়পত্রে কিংবা ব্যাঙ্কে আমানত হিসেবে টাকা রাখছেন। 


এবার আসি আপনি কী ভাবে ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করবেন। ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগের দুইটি মাধ্যম রয়েছে। প্রথমত, বর্তমানে দেশের ২৪টি প্রাইমারি ডিলার ব্যাংক রয়েছে। এই ব্যাংকগুলোতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বললে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিলাম থেকে ট্রেজারি বন্ড কিনে দেবেন। সে ক্ষেত্রে ওই ব্যাংকের সাথে আপনার একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। আর দ্বিতীয় উপায়টি হচ্ছে পুঁজিবাজারের ব্রোকারেজ হাউজগুলোর মাধ্যমে এখন ট্রেজারি বন্ড কেনা যায়। সেক্ষেত্রে ব্রোকারেজ হাউজে বিও অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। তারপর ব্রোকারেজ হাউজ গুলোতে অফিসিয়ালদের সঙ্গে কথা বললে ট্রেজারি বন্ড কিনে দেবেন। 


সাধারণত প্রতি মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক এই অকশন হয়। তার তিনদিন আগে ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে জানালে তাঁরা আপনাকে বন্ড কিনে দেবেন। যেহেতু ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার পরিবর্তিত, তাই ট্রেজারি বন্ডের সবশেষ সুদহার জানতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের হোমপেজে গভর্নমেন্ট সিকিউরিটির উইন্ডোতে ঢুকলেই তা জানতে পারবেন। তবে আপনি একবার যে হারে বন্ডে বিনিয়োগ করবেন, পরবর্তীতে আপনি সুদ পাবেন। সেই হারেই ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগের একটি বড় সুবিধা হল এখানে বিনিয়োগের কোনও লিমিট নেই। 


একদিকে সঞ্চয়পত্রের চেয়ে ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার বেশি, অন্য দিকে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে লিমিট দেওয়া হয়েছে যে, একজন বিনিয়োগকারী ৫০,০০,০০০ টাকার বেশি বিনিয়োগ করতে পারবেন না। যেখানে ট্রেজারি বন্ডে যত খুশি বিনিয়োগ করতে পারবেন। 


অর্থাৎ ১০০০০০, ২০০০০০, ৫০০০০০০ থেকে শুরু করে যত কোটি টাকাই হোক বা বিনিয়োগের কোনও বাধা নেই। তবে আপনি ২,৫০,০০০ বিনিয়োগ করা যাবে না, করতে হবে হয় ২,০০,০০০ অথবা ৩,০০,০০০ ।  তাছাড়া সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে যদি কেউ বেশি বিনিয়োগ করেন তখন তাঁকে সুদের হার কমিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ট্রেজারি বন্ডের ক্ষেত্রে আপনি যত টাকাই বিনিয়োগ করুন, সুদের হার একই থাকবে। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা থেকে ১০% কর কেটে রাখে সরকার। ব্যাঙ্কে আমানত রাখলে যে সুদ পাওয়া যায় সেখানে সরকার কর কাটে ১০%। আর যদি আমানতকারীর টিআইএন না থাকে বা ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার না থাকে তাহলে কর কাটা হয় ১৫%। 


অন্যদিকে কেউ যদি ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করেন তাহলে সুদ থেকে কর কাটা হয় মাত্র ৫%। সুতরাং আয়করের দিক থেকেও ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করাই লাভজনক। 


সব ধরনের ট্রেজারি বন্ডের সুদের টাকা পাওয়া যায় ছয় মাস অন্তর অন্তর। অন্যদিকে একমাত্র পারিবারিক সঞ্চয়পত্র সুদ পাওয়া যায় মাসিক ভিত্তিতে। কিন্তু সেটি বিনিয়োগ করতে পারেন কেবল নারীরা। বন্ডের সুদ বিনিয়োগকারীর ব্যাংক হিসাবে সরাসরি জমা হয় ৫% উৎসে কর কেটে এই সুধ নির্দিষ্ট সময়ে জমা হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা ব্যাংক হিসাবে কোনো শরিয়াভিত্তিক ব্যাঙ্কে থাকলে চলবে না। কারণ ট্রেজারি বন্ড একটি সুদ ভিত্তিক ব্যবস্থা।  


প্রশ্ন হচ্ছে, চাইলেই ট্রেজারি বন্ড ভাঙানো যাবে? ট্রেজারি বন্ডের মেয়াদ দুই বছর ৫, ১০, ১৫ বা ২০ বছর মেয়াদি হয়। তবে বিনিয়োগকারীরা চাইলে এর আগেও বন্ড বিক্রি করে টাকা তুলে নিতে পারেন। বর্তমানে বন্ডের সেকেন্ডারি মার্কেট রয়েছে। তাই সহজেই বন্ড বিক্রি করা যায়। তবে যদি সেকেন্ডারি মার্কেটে বন্ড বিক্রি করা না যায় সে ক্ষেত্রে মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ধরে রাখতে হবে। পরবর্তীতে সার্বিকভাবে বাজারে সুদের হার বাড়লে কিংবা কমলেও বিনিয়োগকারী যে সুদহারে বন্ডে বিনিয়োগ করেছেন তিনি, সেই হারেই বন্ডের সুদ পাবেন শেষ দিন পর্যন্ত।

Previous Post
Next Post

post written by:

0 Comments:

Note: Only a member of this blog may post a comment.