রূপবতী স্ত্রীকে পরপুরুষের সাথে সময় কাটানো অবস্থায় হাতেনাতে ধরে ফেলার জন্য একটা মাস্টার প্ল্যান করেই ফেললাম। আজ নীলাকে বললাম,, আমি অফিসের কাজে দু'দিনের জন্য চিটাগাং যাচ্ছি- বলেই বাসা থেকে বের হলাম। কিন্তু বেশি দূর আর যাই নি। গিয়ে উঠলাম পাশেই একটা হোটেলে। সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় কাটাতে হোটেলে না উঠলেও পারতাম। কিন্তু বাইরে ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে সময় কাটাতে গেলে আমার বাসার আশেপাশের আত্মীয় স্বজন কারো চোখে পড়ে যেতে পারি। তাছাড়া নীলার সাথে যার পরকীয়া চলছে সেও তো দেখে ফেলতে পারে। এটা ভেবে কোনো রিস্ক নিতে চাইলাম না বলেই হোটেলের বন্দোবস্ত। সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকলেই হলো। আমি নিশ্চিত আজ সন্ধ্যাতেই নীলা খালি বাসায় ছেলেটিকে ইনভাইট করবেই করবে । ওরা যখন বাসায় ফষ্টিনষ্টি শুরু করবে ঠিক তখনই আমি বাসায় ফিরে গিয়ে হাতে নাতে পাকড়াও করবো।
নীলা অসাধারন রূপবতী। গল্প উপন্যাসের নায়িকারাই কেবল অতোটা সুন্দরী হতে পারে। আরো ভয়ের কথা হল, যত দিন যাচ্ছে নীলা আরো সুন্দরী হয়ে উঠছে। নীলাকে যে দেখে সেই নীলার রূপে মুগ্ধ হয়ে যায়- এ আমি ঢের বুঝতে পারি। বিয়ের পরে আমার বাসায় বন্ধুমহলের সবার যাতায়াত বেড়ে যায়। আমি বুঝতে পারি এখন তারা আর আগের মতো আমাকে নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে না। যখন তখন তারা আমার খোঁজে বাসায় চলে আসে। আমি খুব বুঝতে পারি আমার সাথে আসলে তাদের কোনো দরকার নেই। তাদের সব দরকার নীলার সাথে। প্রথম দিকে বেশ কয়েকদিন ব্যাপারটাকে বেশ এনজয় করছিলাম। কিন্তু একদিন, হঠাৎ করে একদিন, কথা প্রসঙ্গে সুমন যখন বলে উঠল, ভাবী, আপনি যেমন সুন্দর, আপনার হাতের চা ও খুব মজার। হতে পারে চা মজার, এটা না হয় মানা গেল। কিন্তু শারীরিক সৌন্দর্য্যের কথা কেন? বন্ধু-বউকে এভাবে কি বলা যায়? সেদিন থেকে বাসায় বন্ধুদের আনাগোনা আর পছন্দ হচ্ছিল না মোটেও। আমার সহ্য ক্ষমতা তার সীমানা অতিক্রম করল যেদিন অফিস থেকে ফিরে শুনলাম দুপুর বেলা কবির ফ্ল্যাটে এসেছিল। সে নাকি তার গ্রামের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিল। সেখান থেকে আমাদের জন্য পুকুরের মাছ নিয়ে এসেছে। নীলা হাসি হাসি মুখ করে খবরটা দিলেও আমার মেজাজ তখন সপ্তমে উঠে গেল চট করেই। মাছ দিবি ভালো কথা। দুপুরে ক্যান? সন্ধ্যায় আমি আসার পর দিতে পারতি। তোর তো আমার অফিস টাইম খুব ভালো করেই জানা। নীলা দেখি কবিরের পক্ষেই সাফাই গাইলো। সন্ধ্যা পর্যন্ত মাছ টিকে থাকতো কি? তার প্রশ্ন শুনেও মেজাজ আরো গরম হয়ে গেল। তাকে বললাম দুনিয়াকে অতো সহজে নিলে হবে না। পুরুষরাতো আরো জটিল! সে আমার কথা হেসেই উড়িয়ে দিল। এতোদিন জানতাম মেয়েরা জটিল আজ তোমার কাছ থেকে নতুন করে জানলাম জটিল আসলে ছেলেরা। হিহিহি। কিন্নর কণ্ঠের হাসি শুনে মন থেকে রাগ পড়ে গেল।
সেদিনকার মতো ব্যাপারটা ভুলতে পারলেও আরেকদিন সায়েম যখন ক্যারাম বোর্ড নিয়ে বাসায় এলো, যখন জানতে পারলাম, নীলা ক্যারাম পছন্দ করে বলেই সে এ কাজ করেছে তখন আসলেই মাথায় রক্ত চড়ে গেল। কিন্তু ভদ্র নিপাট মানুষ হওয়াতে মনের কথা মনেই রেখে ভেতরে ভেতরে জ্বলতে থাকলাম।
এরপর থেকে নিয়ম করে প্রতি সন্ধ্যায় সায়েম, কবির, সুমন সবাই চলে আসতো ক্যারাম খেলার জন্য। আর নীলাও যে কি! সে হাসি মুখে তাদের সাথে খেলতে থাকতো, খেলতেই থাকতো। স্বামী হিসেবে যথেষ্ট ভালো থাকতে চাই নীলার কাছে। তাই বিভিন্ন সময়ে আমার খারাপ লাগার কথাটা তাকে বলতে গিয়েও পারিনি। ভয় হয় সে যদি রাগ করে চলে যায়। সে যে আমার মতো এক ছাপোষা কেরানীকে বিয়ে করতে রাজী হয়েছে এটাইতো অনেক। তাই মনের কষ্ট মনেই চেপে রাখলাম। মাঝে মাঝে খেলা বাদ দিয়ে দূরে বসে হাস্যোজ্জল নীলাকে দেখতাম। মনে প্রশ্ন জাগতো, সে কি আমাকে আদৌ ভালোবাসে? যদি ভালোই বাসে তবে আমার মনের কষ্টগুলো কেনো বুঝে না? আমাকে কেন মুখ খুলে বলতে হবে সবকিছু? সে তো নিজেই পারে পৃথিবীর সব পুরুষদের থেকে দূরে থাকতে। সে কেন পারে না সবার থেকে দূরে থেকে আমাকে একটুখানি শান্তি দিতে? সারাক্ষণ মাথার মধ্যে তীব্র যন্ত্রণা করে আমার। যখনই আমার কোনো বন্ধু অথবা তার দূর সম্পর্কের কোনো ভাই অথবা তার ছেলেবেলার কোন ছেলে-বন্ধু বাসায় বেড়াতে আসে আমার মাথায় তীব্র একটা চিনচিনে ব্যথা শুরু হয়ে যায়। তখন সবাইকেই সন্দেহ হয় আমার।
এটা নিশ্চিত যে কারো না কারো সাথে তার একটা অনৈতিক সম্পর্ক চলছে বেশ কিছু দিন। আমি খুব ভালো করে বুঝতে পারি ইদানীং সে কিছু একটা আমার থেকে লুকাচ্ছে। সেদিন বাসায় ফিরে কলিং বেলে চাপ দিয়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হল। দরজা খুলতে এতোটা দেরী কখনো করে না নীলা। দরজা খোলা মাত্র তাই কারণ জিজ্ঞেস কররলাম। বুঝলাম বেশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে সে। গোপন কিছু একটা করছিল নির্ঘাৎ। কী করছিল সে? কেউ কি আমার অবর্তমানে তার সাথে দেখা করতে এসেছিল? কিন্তু বের হবার রাস্তা তো একটাই। তবে নিশ্চয়ই কোথাও লুকিয়ে আছে। সুযোগ পেলে বের হয়ে যাবে।
সন্দেহ মনে রেখে অন্য কোনো কাজ করতে ইচ্ছে করে না। রাতে খেতে বসলাম ঠিকই কিন্তু খাওয়া হল না। লোকটি কে হতে পারে? কোথায় লুকিয়ে গেল চট করে? রান্নাঘরে গিয়ে খুঁজব নাকি একবার? নাকি ওয়াড্রোবের ভেতরটা দেখব? কিন্তু তাহলে তো নীলার কাছে আমার সন্দেহের ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে যেতে পারে। তখন খামাখা লজ্জা পাবো। পরে দেখা যাবে তবে। চোখ কান খোলা রাখতে হবে। চোখ কান খোলা রেখেও কোন লাভ হল না। কোথা থেকে কাউকে বের হতে দেখলাম না। এমনকি নীলা ঘুমিয়ে পড়লে রান্না ঘরে ঢুঁ মেরেও কাউকে পেলাম না। তবে এটা কিন্তু ঠিক বুঝতে পারলাম, নীলা কিছু একটা লুকাচ্ছে আমার থেকে। তার চোখে মুখে অপরাধী অপরাধী একটা ভাব আমার চোখ এড়াতে পারেনি। ব্যাপারটা না বুঝলেই বরং ভালো ছিল। একটুখানি ঘুমাতে পারতাম। নীলা কী লুকাচ্ছে আমার থেকে? নীলার মধ্যে একটা চোর চোর ভাব লক্ষ করছি সবসময়। তাই ঘুম হল না সে রাতে। আসলে রাতের ঘুম আমার একেবারেই হারাম হয়ে গেছে। এর মধ্যে আছে জগতের সব পুরুষ মানুষদের উৎপাত। ঘুমালেও স্বপ্ন দেখি। স্বপ্নের মধ্যেও পুরুষদের আনাগোনা! সেদিন দেখি.. আমার অফিসের বস আমাকে বলছে তোমার বউটা কিন্তু খাসা মাল। ওকে একবার পাঠাবে?
চিৎকার দিয়ে বসকে চড় মারলাম। মেরেই বুঝতে পারলাম ওটা আসলে স্বপ্ন ছিল। ওহ শিট! গোটা পৃথিবীটা যদি পুরুষশূণ্য করা যেতো! এই জ্বালাটা যে কতোটা ভয়ানক তা আমার মতো যারা এই অবস্থায় পড়েছেন তারাই কেবল বুঝতে পারবে। তাই আর এ জ্বালা সইতে পারব না আমি। আজকেই হবে এর দফা রফা। আমার এই গল্প সব পর্ব একসাথে পড়তে আমার আইডিতে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট দিয়ে একটিব হোন।
এতোটা উত্তেজিত ছিলাম যে খেয়ালই করিনি কখন বাসার সামনে হেঁটে হেঁটে চলে এসেছি। দরজায় হাত রেখেই বুঝতে পারলাম ভেতর থেকে আটকানো না। কী ব্যাপার। নিশ্চয়ই কেউ এসেছে।
চলবে.....
লেখক ঃ এসকে আজিমুল
নোটঃ প্রিয় পাঠক, আপনারা চাইলে আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে পারেন।
আমাদের মেইল করুন এই ইমেইলে : [email protected]
0 Comments:
Note: Only a member of this blog may post a comment.