বাসর রাতেই বুঝতে পারলাম বউ ভার্জিন না। পারিবারিক ভাবেই বিয়ে করেছি অথচ ভাবতেই পারছিনা নববধূ কুমারী না। অনেক চিন্তায় পরে গেলাম তবে কি আমার আগে অন্য কেউ এসেছিল তার জীবনে? না, এটা কি করে হয়।
গতকাল, বর সেঁজে বউ নিয়ে বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। বউ দেখতে অনেক সুন্দর, চেহারাই একটা মায়াবী ভাব আছে। রাত ১২ টায় আমাকে বাসর ঘরে ঢুকতে দেওয়া হলো। অনেক আশা, ভালোবাসা নিয়ে নববধূর কাছে এগিয়ে গেলাম। নববধূর লম্বা গুমটা তুলে পলকবিহীন তাকিয়ে বললাম,
- আচ্ছা তোমার নাম কি?
নববধূ আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলে,
- আমার নামও জানেন না?
- না, এখন বলো।
- আমার নাম প্রাচী!
- প্রাচী খুব সুন্দর নাম, আসলে হঠাৎ করেই আমাদের বিয়ে হয়ে গেল তাই আর নাম জানা হলো না। এখন এই সব বাদ দিয়ে চলো একটু...
- এভাবে বলতে নেই, আমার লজ্জা করে।
আমাদের নতুন জীবনের প্রথম রাত কাটলো ভালোই। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি, প্রাচী একপাশে শুয়ে আছে। বিছানায় কুমারীত্বের কোনো লক্ষণের দাগ নেই, মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পরলো। তাহলে কি প্রাচী কুমারী না! বিছানা ভালো করে দেখেও ভার্জিনের কোন চিহ্ন বিন্দু পেলামনা।
ফ্রেশ হয়ে এসে টেবিলে বসে ভাবছি গত রাতের কথা গুলো। একটু পরই প্রাচী ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আসলো নাস্তা করতে। পরিবার বলতে মা, ছোট বোন, আমি আর নতুন এলো প্রাচী। সবাই একসাথে বসে নাস্তা করছি তখন প্রাচী হাত বাড়িয়ে আমাকে নাস্তা দিতে চাইলো আমি মাথা নেড়ে বুঝালাম নাস্তা করার কোন ইচ্ছা নাই।
মা কারন জানতে চাইলো, আমি কিছুই বললাম না। আমি ভাবছি, এটা কি করে হয় প্রাচী ভার্জিন না। নাস্তা না করেই টেবিল থেকে উঠে রুমে চলে আসলাম। প্রাচী ও আসলো রুমে, আমি চুপ করে ভাবছি প্রাচীকে জিগ্যেস করে দেখবো নাকি।
- তুমি কি কিছু নিয়ে চিন্তিত?
প্রাচীর কন্ঠ শুনে ওর চোখে তাকালাম আর বললাম,
- না, কেনো?
-না মানে, নাস্তা করলে না আবার মুখেও চিন্তার ছাপ।
- এমনিই।
বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম, হাঁটতে হাঁটতে চলে আসলাম পার্কে। পার্কের এক পাশে বসে ভেবেই চলছি প্রাচীর কুমারীত্ব কে নষ্ট করলো। প্রাচীকে নিয়ে চিন্তায় মগ্ন তখনই পিছনে শুনতে পেলাম পুরাতন প্রেমিকার আওয়াজ। পিছনে তাকিয়ে দেখি সে আমার দিকেই আসছে।
- ইথান, কেমন আছো?
রাইসার কথা শুনে মুচকি হেঁসে বললাম,
- ভালো, তুমি?
- আমিও ভালোই! এতদিন পর দেখা আর তুমি কি কোনোকিছু নিয়ে চিন্তিত!
- তেমন কিছুনা, তা এতদিন পর কোথায় থেকে?
- বেড়াতে আসছি আর তুমি চিন্তিত কি নিয়ে?
- আচ্ছা, ভালোই।
- বলো কি নিয়ে চিন্তায় আছো? আমার কথা ভেবে নাকি? আমার কিছু করার ছিলো না, বাবা জোর করে বিয়ে দিয়ে দিছে।
- আচ্ছা যা হওয়ার হয়ে গেছে। একটা কথা বলবা?
- বলো?
- মেয়ে ভার্জিন কিনা কিভাবে বুঝবো?
- শারীরিক সম্পর্ক করলে রক্ত বের হয় এতেই বুঝা যায় সে ভার্জিন কিনা। এটা ছাড়া আর কোন উপায় আমার জানা নাই।
আমি আর কিছু না বলেই উঠে চলে আসলাম। বাড়ি এসে প্রাচীকে কোথাও পেলামনা, সে নাকি তার কোন বান্ধবির সাথে দেখা করতে গেছে। এতেই আমার একটু সন্দেহ হলো, আজ প্রাচী আসলে জানতে চাইবো সে কারো সাথে শারীরিক সম্পর্ক করছে কিনা।
প্রাচী বাসায় ফিরে এলে, তাকে কিছু জিগ্যেস করতে সাহস হয়নি। কি ভাবেই বা প্রশ্ন করবো, তুমি ভার্জিন কিনা? এতে হয়তো সে কষ্ট পাবে যে আমি থাকে বিশ্বাস করছি না বা তার চরিত্র নিয়ে সন্দেহ করছি। প্রাচী বাসায় ফিরেই আমাকে প্রশ্ন করলো,
- কোথায় গিয়ে ছিলে?
প্রাচীর এমন প্রশ্ন শুনে ঘাবড়ে গেলাম আর নিচু কন্ঠে বললাম,
- কোথাও না বন্ধুদের কাছে।
- বন্ধুদের কাছে, তাহলে পার্কের মেয়েটা কে ছিল?
- ওই আমার বন্ধু।
প্রাচী আমার উত্তর শুনে আর কিছু বলে নি। দেখতে দেখতে সারাদিন কেটে গেলো, রাতে আবার প্রাচীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে নিশ্চিত হলাম প্রাচী ভার্জিন না। পরেরদিন থেকেই প্রাচীকে এড়িয়ে চলতে শুরু করলাম।
চাওয়া, না চাওয়া মিলেই আমার আর প্রাচীর জীবন চলছে। আমি প্রাচীর কাছে তার কুমারীত্ব নিয়ে কোনো কিছু জানতে চায় না কারণ মা আমাকে বিয়ে করিয়েছে প্রাচীকে অনেক পছন্দ করে। আমি চাইনা মার সাথে আমার মনোমালিন্য হোক।
বিয়ের ১০-১২ দিন পরই একদিন অফিস থেকে বাসায় ফিরে দেখি সবাই যেনো কেমন খুশী খুশী। রুমে যেতেই প্রাচী হঠাৎ আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি অনেকাংশ অবাক হলাম প্রাচীর জড়িয়ে ধরা দেখে। প্রাচী জড়িয়ে ধরে বলে,
- আমাদের নতুন অতিথি আসতে চলেছে।
- মানে!
- তুমি বাবা হবা আর আমি মা।
কথাটা শুনেই একটা বড় ধাক্কা খেলাম। একটা মেয়ে বিয়ের ১০-১২ দিন পরেই কি ভাবে গর্ভবতী হয়! প্রাচী অন্য কারো সন্তান নিয়ে আসেনি তো...
পার্ট ২
প্রাচী অন্য কারো সন্তান নিয়ে আসেনি তো! আমি কিছু না বলেই চুপ করে রইলাম। প্রাচীর কুমারীত্ব কে নষ্ট করছে? মনে হাজার প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। বিয়ে দুই মাস পরে একদিন রাতে প্রাচীকে জিগ্যেস করলাম,
- প্রাচী, তুমি কি বিয়ের আগে ভার্জিন ছিলে?
আমার কথা শুনে প্রাচী চুপ করে রইল তাই আবার বললাম,
- তুমি কি ভার্জিন ছিলা?
- হ্যাঁ, এতদিন পর একথা কেনো?
- ভার্জিনের কোনো প্রমাণ তো আমি পাইনি!
- আমি ভার্জিন!
আমি আর কিছু না বলে চুপ করে রইলাম কারণ প্রাচী মিথ্যা বলছে এটা তার মুখেই বুঝা যাচ্ছে। প্রাচী হয়তো ভাবছে তার বলা মিথ্যে আমি বুঝতেই পারবোনা।
দেখতে দেখতে আরো একমাস কেটে গেলো। আমি এবার সিদ্ধান্ত নিলাম এই ভার্জিনহীনকে তালাক দিব। মা, ছোট বোন অনেক বুঝানোর চেষ্টা করলো কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। আমার এক কথা এই বাড়িতে প্রাচী থাকলে আমি থাকবো না আর আমি থাকলে প্রাচী থাকতে পারবে না। মা আর কি করবে বাধ্য হয়ে আমার কথা মেনে নিল।
প্রাচীকে নিয়ে আমি কোর্টে হাজির হলাম। বিচারককে প্রাচী বলে, সে সন্তানসম্ভবা। আমি বলেছিলাম, এই সন্তান আমার চাই না এটা ও মেরে ফেললেও আমার কিছু যায় আসে না আমার শুধু ডিভোর্স চায়।
বিচারক বলে, এই সন্তান দুনিয়ায় আসার আগ পর্যন্ত ডিভোর্স হবে না। তারপর আর কি বাধ্য হয়ে প্রাচীকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসতে হলো। রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছি, ভার্জিনহীন মেয়ের সাথে কি করে থাকবো।
আমার মা কিছুই জানে না, কেনো প্রাচীকে আমি ডিভোর্স দিতে চায়। মা শুধু এটাই জানে প্রাচীকে আমার ভালো লাগে না। আমার চিন্তা ভাবনা একটাই বাচ্চা যতো তাড়াতাড়ি দুনিয়ায় আসবে তত তাড়াতাড়ি ডিভোর্স। আজ কয়েকদিন অফিসেও যায় না। সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসলাম তখন প্রাচী এসে বলে,
- তোমাকে কি নাস্তা দেবো?
- কোন অসতী নারীর হাতের খাবার খেতে চাই না।
আমার কথা শুনেই প্রাচীর মুখটা মলিন হয়ে গেল,
- আচ্ছা, তোমার বোনই দিয়ে যাবে খেয়ে নিও।
প্রাচী চলে গেল, আমি বসে অফিসের কাজ করছি তখনই ছোট বোন তানহা আসলো নাস্তা নিয়ে। আমার সামনে এসেই বলল,
- ভাইয়া, নাস্তা খাও আর ভাবি কাঁদছে কেন?
- জানি না! এবার এখান থেকে যা।
তানহা চুপচাপ চলে গেলো। আমি নাস্তা করে, বাসা থেকে বের হয়ে চললাম বাসস্টপে। আজ আমার পুরনো দুই বন্ধু আসছে ঢাকা থেকে। গত বছরই পড়াশোনা শেষ করে তারা ঢাকায় চাকরী নেয়। বাসস্টপে দুই বন্ধু সুমন, রানা তাদের সাথে দেখা করলাম,
- ভাবিকে আনলি না যে?
রানার কথা শেষ হতেই সুমন বলল,
- আরে বউকে লুকিয়ে রাখবে তাই হয়তো আনেনি!
আমি মুচকি হেঁসে বললাম,
- এই সব বাদ দে, বিকালে আমাদের বাসায় আসলেই দেখতে পাবি।
আমি সুমন, রানা কে বিদায় দিয়ে বাসায় চলে আসলাম। বাসায় ফিরতে দুপুর হয়ে গেলো। বাসায় আসার সময় ভালো করে বাজার করে আনলাম। আজ যে, এতদিন পর বন্ধুরা আসতেছে আমাদের বাসায়।
মা ভালো করে রান্না করলো সুমন, রানার জন্য। মায়ের হাতের রান্না অনেক পছন্দ ওই দুটার। ছোটবেলা থেকে আসা যাওয়া আমাদের বাড়িতে আর তিনজন একসাথে খাওয়া ঘুরা তাই আমাদের এতোমিল।
বিকাল হতেই রানা, সুমন চলে আসলো আমাদের বাসায়। দুজনেই আমার রুমে গিয়ে বসলো,
- কই রে ভাবিকে তো দেখছি না?
রানার কথা শুনে, আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই সুমন বলে,
- এতদিন একটা পিকও দিলি না বললি সামনে এসে দেখতে এখন ভাবী কই।
আমি দুজনকে শান্ত করতে বললাম,
- এখনই আসবে তোদের খাবার দিতে।
কিছুক্ষণ তিনজন বসে গল্প করলাম। হঠাৎ প্রাচী আসলো খাবার দিতে, প্রাচী অনেক পরিপাটি করে সাঁজ করে আসছে। যদিও প্রাচী এমনেই অনেক সুন্দর। প্রাচীকে দেখে দুজনেই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সুমন প্রশ্নচোখে তাকিয়ে আছে আমার মুখে, যেনো সে ভূত দেখছে।
- ভাইয়া, আপনারা কেমন আছেন?
প্রাচীর কথা শুনে সুমন ঘাবড়ে গেল! আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
- আমরা ভালো আপনি?
সুমনের মুখ দিয়ে আর কোন শব্দ বের হচ্ছে না। সুমন, রানাকে ইশারা করে বলে,
- ইথান আমরা আজ যাই!
আমি ওদের এমন ব্যবহার দেখে অবাক চোখে বললাম,
- কিরে খাবি না?
- এখন খিদে নাই, অন্য একদিন আসবো।
প্রাচী আমাদের কথা শুনে বলল,
- এত কষ্ট করে মা রান্না করলো আর আপনারা না খেয়েই চলে যাবেন!
সুমন রানাকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। সুমন নিরব হয়ে হাটছে কোনো কথা নেই তা দেখে রানা বলল,
- কিরে, আমাকে নিয়ে চলে আসলি যে?
- এমনি!
- এমনি কোনো? কি হইছে আমাকে বল?
- ইথানের বিয়ের সপ্তাহখানেক আগে পাশের এলাকায় গিয়েছিলাম ইথানের সাথে কিছুদূর যাওয়ার পর দেখলাম একটা মেয়ে আসছে। অন্ধকার আর মানুষের চলাচল একদম কম। দুজনে মুখ ঢেকে এগিয়ে গেলাম, দেখলাম মেয়েটা একা দেখতেও অনেক সুন্দর। সেদিন ইথান মেয়েটাকে ধর্ষন করে ছিল আর আমি ধর্ষণ করতে ইথানকে সাহায্য করেছিলাম।
সুমনের সব কথা শুনে রানা বলল,
- তো, কি হইছে এখন? এই ঘটনা বলার জন্য নিয়ে চলে আসলি আমাকে?
- সে দিনের মেয়েটা আর কেউ না, ইথানের বউ।
পার্ট ৩
সেদিন ইথান মেয়েটাকে ধর্ষন করে ছিল আর আমি ধর্ষণ করতে ইথানকে সাহায্য করেছিলাম।
সুমনের সব কথা শুনে রানা বলল,
- তো, কি হইছে এখন? এই ঘটনা বলার জন্য নিয়ে চলে আসলি আমাকে?
- সে দিনের মেয়েটা আর কেউ না, ইথানের বউ।
- কি! ইথান ধর্ষণ করে আবার এই মেয়েকেই বিয়ে করছে?
- আরে ও তো রাতকানা রোগে আক্রান্ত ছিলো। সে রাতে ভালো করে দেখে না, তাই হয়তো বিয়ে করে নিয়েছে।
- তাহলে ইথানের বউ তোকে বা ইথানকে কেন চিনলো না?
- মুখ ঢাকা ছিলো সে দিন, এত কথা বাদ দে ইথানকে এইসব বলিস না। বললে হয়তো ইথান খুব কষ্ট পাবে তারচেয়ে এসব না জেনেই ওরা দুজনে ভালো থাক।
সুমন আর রানা যার যার বাড়ি চলে গেলো। কয়েকদিন বাড়ি থেকে আবার চলে গেলো ঢাকায়। এই কয়েকদিনে একবারও রানা বা সুমন কেউ আমাদের বাড়ি আসেনি।
এদিকে আমি শুধু সময় গুনছি কখন বাচ্চা হবে আর প্রাচীকে ডিভোর্স দিব। আমি যে আর ভার্জিনহীন মেয়ের সাথে থাকতে চায় না। কয়েক মাস পরই প্রাচীর বাচ্চা হবে তাকে হাসপাতাল নিয়ে গেলাম, সেদিন ছেলে সন্তান হলো। ছেলে সন্তানের উপর আমার কোন আগ্রহ নেই।
প্রাচীর সামনেই ডাক্তার কে জিগ্যেস করলাম,
- ডাঃ প্রাচী সুস্থ হতে কয়দিন লাগবে?
- ১৫-১৬ দিন!
- আচ্ছা
প্রাচী অবাক চোখে তাকিয়ে রইল আমার দিকে। সে হয়তো ভাবছিল, বাচ্চা হয়ে গেলে আমি আর ডিভোর্স দিব না। আমার সেই আগের কথাই যে ভার্জিন না তাকে আমি রাখবো না।
প্রাচী সুস্থ হয়ে গেলে, প্রাচীকে বাড়ি না নিয়ে চলে গেলাম কোর্টে। প্রাচীকে যে ডিভোর্স দিতে হবে। বিচারক বলে, এই বাচ্চার সকল খরচ ইথানের দিতে হবে। এ কথা শুনে আমি বলি, আমি বাচ্চার বাপ না, এই বাচ্চা অন্য কারো।
বিচার জানতে চাইলো এটাই প্রাচীকে ডিভোর্স দেওয়ার কারন কিনা? আমি সেদিন বলেছিলাম, আমার বউ সতী না আর এই কারণেই ডিভোর্স দিতে চাই, আমি এই বাচ্চাও চাই না।
বিচারক এবার প্রাচীর কাছে জানতে চাইলো, ইথানের সাথে কি থাকতে চাও! প্রাচী বলে, আমি আর কি বলবো আমিও চাই দুজন আলাদা হয়ে যাই। দুজনের কথা শুনে বিচারক বলে,
- বাচ্চাকে ইথান ১লাখ টাকা দিবে আর প্রাচী যেহেতু নিজেই ডিভোর্স চাই তাই প্রাচীকে কোন প্রকার জরিমানা দিতে হবে না।
বিচারকের মুখে জরিমানার কথা শুনে বললাম,
- এই সন্তান আমি মানি না তাই টাকা ও দিতে পারবো না।
বিচারক প্রাচীর দিকে তাকিয়ে বলে,
- প্রাচী, তুমি কি টাকা চাও বাচ্চার জন্য!
প্রাচী আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
- আমার কিছু লাগবে না।
বিচারক প্রাচীর আর আমার ডিভোর্সের সকল কাগজ রেডি করে দিল। বিচারক আমার আর প্রাচীর কাছ থেকে ডিভোর্সের কাগজে সাক্ষর করিয়ে নিল। আমি আর প্রাচী ডিভোর্সের কাগজে সাক্ষর করে দিলাম, আমরা এখন আলাদা কারো উপর আর কোনো অধিকার নেই।
প্রাচী বাচ্চাটা কোলে নিয়ে কোর্ট থেকে বের হচ্ছে। যদিও আমি তার পিছনে একটু দূরে ছিলাম। প্রাচী যখনই কোর্টের বাহিরে আসলো তখনই কেউ একজন বলল,
- প্রাচী, কেমন আছো তুমি?
কন্ঠটা শুনে পিছনে ফিরেই প্রাচী অবাক,
- রাজিব তুমি এখানে?
- একটা জমির ব্যাপারে কোর্টে আসছি।
- তোমার বউ কেমন আছে?
রাজিব অপরাধী ভঙ্গিতে বলে,
- ভালো, তুমি বিয়ে করেছো তো?
- কোলে দেখো না?
- তা ওনি কই?
- আছে, আজ আমি যাই।
প্রাচী মাথা নিচু করে পথচলা শুরু করে। রাজিব অবাক চোখে দেখছে প্রাচীর পথ চলা। রাজিব ভিতর যাওয়ার সময়ই ডাক দিলাম আমি,
- এই যে শুনেন!
রাজিব দাঁড়ালো আর আমার দিকে কিছুটা এগিয়ে এসে বলে,
- আমাকে ডাক দিলেন যে?
- একটু কথা বলার ছিল!
- বলেন?
- আচ্ছা, একটু আগে যে মেয়েটার সাথে কথা বললেন তাকে চিনেন?
- হুম, ও আমার পুরাতন প্রেমিকা!
আমি কিছুটা অবাক হয়ে বললাম,
- মানে?
- এখন থেকে প্রায় বছর খানেক আগে, আমি আর প্রাচী প্রেম করতাম। আমাদের প্রেম চলাকালীন আমার পরিবার প্রাচীর মা-বাবাকে বিয়ের কথা বলে তখন প্রাচীর বাবা-মা আমার কাছে বিয়ে দিতে রাজি হয় নি। আমি তখন প্রাচীকে পালিয়ে বিয়ে করার কথা বলি কিন্তু প্রাচী রাজি হয়নি। পরে বাধ্য হয়ে বাবা-মার পছন্দ মতো বিয়ে করে ফেলি। তা হঠাৎ প্রাচীর কথা জিগ্যেস করলেন, প্রাচী কি আপনার পরিচিত!
রাজিবের কথায় কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বললাম,
- না, এমনিই।
- আচ্ছা চলি আমার আবার কাজ আছে।
বলেই রাজিব চলে গেলো। রাজিব প্রাচীর পুরাতন প্রেমিক হলে, প্রাচীর কুমারীত্ব কে নষ্ট করছে! এইসব আর ভাবতে পারছিনা, বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পরলাম। আজ থেকে অসতী কোনো মেয়ে থাকবে না আমার পাশে।
অন্যদিকে প্রাচী কোর্ট থেকে বের হয়ে, মা বাবার কাছে ফিরে যায়নি! প্রাচী সোজা ট্রেনে করে চলে আসলো কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকা। প্রাচীর এক চাচাতো ভাই থাকে ঢাকায়, তাকে কল দিলো স্টেশন থেকে নিয়ে যেতে। প্রাচী ঢাকায় পৌঁছে যাওয়ার পর তার চাচা ভাই নিয়ে গেলো বাসায়।
এদিকে আমি ঘুমানোর কিছুক্ষণ পরই কল আসলো মোবাইলে তাই ঘুম ভেঙে গেলো। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি সুমন কল করেছে। কলটা রিসিভ করতেই সুমন বলল,
- কিরে বন্ধু কি খবর?
- ভালো, তোর!
- আছি ভালোই, ভাবীর কি খবর? বাচ্চা হয়ছে?
- হয়েছে!
- একটা পিক দে ভাতিজার!
সুমনের কথা শুনে নিচু কন্ঠে বললাম,
- আমার কাছে ও নাই।
- নাই মানে?
- আমি প্রাচীকে ডিভোর্স দিয়ে দিছি আজকে!
- কেনো?
আমি সব কিছু খুলে বলতে শুরু করলাম সুমনের কাছে! আমার সব কথা শুনে সুমন বলল,
- মনে পরে, তোর বিয়ের সপ্তাহ খানেক আগে তুই আর আমি রাতে পাশের এলাকায় গিয়েছিলাম।
- হুম, মনে আছে।
- সেদিন তুই একটা মেয়েকে ধর্ষণ করেছিলি আর আমি তোকে ধর্ষণ করতে সাহায্য করেছিলাম, মনে পরে?
- হুম, সব মনে আছে!
- সে দিনের ধর্ষীতা মেয়েটা আর কেউ না, প্রাচী ভাবীই ছিল।
পার্ট ৪
সে দিনের ধর্ষীতা মেয়েটা আর কেউ না, প্রাচী ভাবীই ছিল। সুমনের এমন কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লাম! সুমন আবার বলতে শুরু করে,
- সেদিন আমি যখন তোর বাসায় গেলাম ভাবিকে দেখে তো পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছিল, এই কারণেই তোর বাড়ি থেকে চলে আসছিলাম। কিন্তু এখন নিজেকে ভর অপরাধী মনে হচ্ছে, সত্য কথাগুলো অনেক আগেই তোকে বলা উচিত ছিল তাহলে হয়তো আজ তোদের ডিভোর্স হতো না।
সুমনের কথা শুনে, লাফ দিয়ে শুয়া থেকে উঠে বসে পড়লাম আর বললাম,
- এই কথাগুলো তুই আমাকে আগে কেন বললি না!
- কি করে বলবো, সেদিন তো ভাবীর গায়ে আমিও হাত দিয়ে ছিলাম! ভাবীর গায়ে আমি স্পর্শ করছি এটা ভাবলেই হয়তো তুই কষ্ট পেতি তাই বলেনি।
আমি আর কিছু না বলেই কলটা কেটে দিলাম। আগে যদি এই কথাগুলো জানতাম, তাহলে হয়তো বিয়ের আগে করা পাপের পাশ্চিত্ব করতে পারতাম। যে করেই হউক প্রাচীকে সত্যটা বলে আবার বিয়ে করতে হবে, প্রাচীর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
এই সব ভাবতে ভাবতে কাপড় পরে চললাম প্রাচীর বাসায়, যেখানে প্রাচীর পরিবার থাকে। ইশ! কেনো যে সুমন আরো দুদিন আগে বললো না। আমার সব ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে সিমা কল দিল, সিমা আমার কলেজ লাইফের একমাত্র মেয়ে ফ্রেন্ড! কল রিসিভ করতেই সিমা বলে,
- ইথান, ভূলে গেলি নাকি? আর শুনলাম প্রাচী ভাবীর সাথে নাকি ডিভোর্স হয়ে গেছে?
সিমার কথা শুনে কিছুটা অবাক হলাম, ডিভোর্সের কথা জানলো কি করে।
- যা শুনলি সব সত্য, এবার প্রাচীকে আবার বিয়ে করবো।
- কি এমন হলো? যে, সকালে ডিভোর্স দিয়ে বিকালে আবার বিয়ে করতে হবে!
- এ কথা বলা যাবে না!
- আচ্ছ থাক বলতে হবে না।
আমি আর কথা বাড়াইনি, কল কেটে চললাম প্রাচীর খুঁজে। প্রায় ঘন্টা খানেক পর চলে আসলাম প্রাচীর বাবার বাসায়। প্রাচীর মা আমাকে একা দেখে অবাক, প্রাচী কই জানতে চাইলো! আমি নিজেও অবাক হলাম তাদের কথা শুনে।
আমি বললাম, সকালে ডিভোর্স হওয়ার পর প্রাচী এখানে আসেনি? প্রাচীর মা অবাক হয়ে বলে, প্রাচী এখানে আসে নাই। এ কথা শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো, প্রাচী কোথায় যেতে পারে। সবাই প্রাচীকে এখানে সেখানে কল দিয়ে খুঁজতে শুরু করলাম।
অন্যদিকে প্রাচীর দূর সম্পর্কের চাচাতো ভাই প্রাচীকে নিয়ে তার বাসায় রাখলো। প্রাচীর চাচাতো ভাই প্রাচীকে কাজ দিবে বলে আর কোথাও যেতে দেয় না। কয়েকদিন পরই প্রাচীর চাচাতো ভাই প্রাচীকে বলে,
- প্রাচী, তোর কুলে এই ছেলে থাকলে কোন কাজ করতে পারবি না। ছেলেটাকে আগে কোথাও রাখার জায়গা করতে হবে।
প্রাচী এমন কথা শুনে বিচলিত হয়ে গেল,
- এতটুকু বাচ্চা কোথায় রাখবো?
- এতিমখানায় দিয়ে দিলে তারাই দায়িত্ব নেবে!
- যদি কিছু হয়ে যায়।
- আমার পরিচিত একজন আছে কিছু হবে না, আর তুই চাইলে প্রতি শুক্রবারে নিয়ে আসতে পারবি।
- আচ্ছা, তুমি রাখার ব্যবস্থা করো।
কয়েকদিন পরই বাচ্চাটা একটা এতিমখানায় দিয়ে আসলো প্রাচী আর প্রাচীর চাচাতো ভাই। প্রাচীর বাচ্চা রেখে আসতে খুব কষ্ট হচ্ছিল তবুও জীবিকার জন্য রেখে আসতেই হলো। প্রাচী বাচ্চাটাকে এতিমখানায় রেখে অনেক কষ্টে থাকতে শুরু করে।
এদিকে আমি আর প্রাচীর পরিবার অনেক খুঁজেও প্রাচীকে কোথাও পেলাম না। একদিন সিমা আসলো আমাদের বাসায়, আমাকে অনেক বুঝায় নতুন বিয়ে করতে। সিমা দেখতে খারাপ না তাই হয়তো মা সিমাকে পছন্দ করে ফেললো।
মা সিমাকে বিয়ে করতে বলে, কিন্তু আমি না দেয়। মা তারপরও সিমার পরিবারের সাথে কথা বলে আমাদের বিয়ে ঠিক করে পেলে। শেষ মেষ বাধ্য হয়ে সিমাকে বিয়ে করি। বাসর রাতে সিমা বলে, আমি সেই কলেজ থেকেই তোমায় পছন্দ করি।
আমার বিয়ে হয়ে গেছে এটা নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যাথা নেই। আমার একটাই চিন্তা প্রাচীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া। সিমা আর আমি ভালোই আছি, জীবনও ভালো চলছে।
অন্যদিকে প্রাচীকে তার চাচাতো ভাই কাজের কথা বলে নিয়ে গেলো একটা লোকের কাছে আর বলল,
- এই নেন, যার কথা বলেছিলাম!
লোকটা প্রাচীকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বলে,
- হুম, এই নাও টাকা গুনে দেখো!
প্রাচী ওদের কথা শুনে অবাক কন্ঠে বলল,
- কিসের টাকা?
- কিছু না! পুরো ১ লাখ আছে, গেলাম সাহেব।
প্রাচীর চাচাতো ভাই চলে গেলো টাকা নিয়ে। প্রাচী জানতে চাইলো কেনো টাকা নিচ্ছে কিন্তু কিছু না বলেই প্রাচীর চাচাতো ভাই চলে গেলো। যখনি প্রাচী আসতে চাইলো তখনি লোকটা জোর করে ধরে, প্রাচীকে একটা রুমে আটকে দিলো। প্রাচীর বুঝতে আর বাকি রইল না যে, তাকে বিক্রি করে দিছে।
প্রাচীকে একটা রুমে আটকিয়ে রাখার পর রাতে প্রাচীর রুমে একটা লোক আসলো।
- কে আপনি? আমাকে ছেড়ে দেন।
প্রাচীর কথা শুনে লোকটা বলে,
- আজ সারা রাতের জন্য তুমি আমার!
- কি?
লোকটা প্রাচীর সাথে জোর করে শারীরিক সম্পর্ক করলো। সারারাত লোকটা বাধ্য করে প্রাচীকে শারীরিক সম্পর্ক করতে। সকাল হতেই লোকটা চলে গেলো কিন্তু প্রাচী ওই রুমেই বন্ধী। প্রাচীর রুমে সকল কিছুই আছে।
প্রাচীকে সময় মতো খাবার দিলো, সারাদিন বিরতি দিলো, রাতে হয়তো আবার কোন জানোয়ার আসবে। সন্ধ্যা হতেই প্রাচী বুঝলো দরজায় কেউ আসছে। প্রাচীর আর বুঝতে বাকি নেই, আজ সারা রাত নতুন কেউ ভোগ করবে তার শরীর। ভিতরে একটা লোক ঢুকলো, প্রাচী লোকটাকে দেখে থমকে গেলো! লোকটা প্রাচীকে দেখে বলল,
- শেষ পর্যন্ত পতিতা?
পার্ট ৫
রাজিবের মুখে এমন কথা শুনে, প্রাচী মাথা নিচু করে বসে রইল। প্রাচী কাছে প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই এখানে তো ভাগ্য টেনে এনেছে। প্রাচীর নিরবতা দেখে রাজিব বলে,
- এখানে কি করে আসলে?
- যেদিন কোর্টে দেখা হয়ে ছিল, সেদিন আমার ডিভোর্স হয়ে গেছিল। তারপরে এই শহরে এসেছিলাম একমুটো ছাই আগলে ধরে বাঁচতে কিন্তু ভাগ্য এখানে বিক্রি করে দিল।
রাজিব প্রাচীর কথা শুনে বিছানায় প্রাচীর কাছে গিয়ে বসলো আর বলল,
- চলো শুরু করি, পুরাতন সেই জিনিস আবার কখনো ফিরে পাবো ভাবতেই পারছিনা!
- এই তোমার আসল রুপ, তুমি না আমাকে ভালোবাসতে!
- সারারাতের জন্য টাকা দিয়ে নিছি, টাকা উসল না করেই ছেড়ে দিব!
প্রাচী অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে রাজিবের দিকে। রাজিব কোন দিক না ভেবেই প্রাচীকে বিছানায় শুয়ে দিল। প্রাচীর সাথে জোর করে শারীরিক সম্পর্ক করলো। সকাল হতেই প্রাচীর নিথর দেহ ফেলে চলে গেলো রাজিব। প্রাচীর শরীরে যেনো কোনো শক্তি নেই, এভাবেই চলছে প্রাচীর পতিতালয়ের জীবন।
এদিকে আমার আর সিমার জীবন ভালোই কাটাচ্ছে। এখনো আমি প্রায় খুঁজে বেড়ায় প্রাচীকে তার কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য।
কয়েক মাস পরই সিমার বাচ্চা হবে। মা, ছোট বোন, সিমার পরিবার সবাই অনেক খুশী। আমি প্রাচীকে প্রায় ভূলেই গেছি এখন আর প্রাচীকে খুঁজতে যায় না। আমার জীবন ভালোই চলছে, চাকুরী আর পরিবার এ যেনো এক সুখ রাজ্য। হঠাৎ একদিন সুমন কল দিল,
- ইথান কেমন আছস?
- ভালো, তুই?
- আমি মনে হয় আর বাঁচবো না।
সুমনের কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম, কি যাতা বলছে এসব!
- কেনো? কি হয়েছে?
- আমার শরীরে HIV ধরা পরছে, ডাক্তার বলছে আর ১ মাস বাচঁবো!
এই কথা বলেই সুমন কেঁদে দিলো। সুমন কাঁদো কন্ঠে বলতে থাকে, আমার পাপের শাস্তি মনে হয় পেয়ে গেছি। এখানের একটা পতিতালয়ে প্রায় যেতাম, কয়েক মাস আগে ডাঃ বলছে ওই পতিতালয়ের কয়েক জন নারী নাকি এইস আক্রাতন! আমি শেষ বন্ধু, আমাকে ক্ষমা করে দিস আর প্রাচী ভাবীকে যদি কখনো খুঁজে পাস তাহলে বলিস আমাকে ক্ষমা করে দিতে।
সুমন কলটা কেটে দিল, আমি নিজেও কান্না করতেছি প্রিয় বন্ধু আজ মরনের পথে। কয়েক দিন পরই সুমন মারা গেলো, তাদের পরিবার যেনো দুঃখের সমুদ্রে ভাসছে। সুমনকে মাটি দেওয়া হলো পারিবারিক কবরস্থানে!
অন্যদিকে প্রাচীর জীবন বন্ধী চার দেওয়ালে। প্রাচী পতিতালয় থেকে বের হতে চাইলে তারা বলে ১ লাখ টাকা দিয়ে কেউ কিনে নিলেই মুক্তি পাবে।
প্রাচী আল্লাহর কাছে শুধু বলে, আল্লাহ যে করে হউক এই জাহান্নাম থেকে রক্ষা করো। দিনরাত একটাই চাওয়া এখান থেকে মুক্তি। প্রাচীর ছেলের কাছে যেতে খুব ইচ্ছে করে কিন্তু পতিতালয় থেকে বেরতে দেয় না।
হঠাৎ একদিন রাতে, মদ খেয়ে হেলেধুলে একজন লোক প্রাচীর রুমে ঢুকল। প্রাচী দেখেই ভয় পাচ্ছে, একটা মাতাল লোক তার সাথে আজকে। লোকটা প্রাচীর দিকে অদ্ভুত নজরে তাকিয়ে বলল,
- এই মেয়ে ওখানে কি করস! আমার কাছে আয় তোকে আদর করবো।
প্রাচী ভয় পেয়ে আমতা আমতা করে বলল,
- না, মানে না...
- আমার কাছে এসে বস! আমাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
প্রাচী ভয়ে ভয়ে লোকটার কাছে এগিয়ে গেল। প্রাচী খেয়াল করে দেখে, তার সাথে কিছু করতে চাওয়ার কোনো আগ্রহ নাই লোকটার। প্রাচী লোকটার কাছে যেতেই বলে,
- এখানে বসো।
প্রাচী ভয়কে জয় করে লোকটার পাশে বসলো। লোকটা প্রাচীকে ভালো করে দেখে বলল,
- দেখতে তো ভালোই, এমন কাজ কেনো করো?
প্রাচী চুপ করে আছে দেখে, লোকটা প্রাচীর কাছে আবার জানতে চাইলো। প্রাচী তখন তার জীবনের সকল কিছু লোকটার কাছে বলে। সবশেষে প্রাচী লোকটার কাছে জানতে চাইলো, সে পতিতালয় কেনো আসে।
লোকটা বলতে শুরু করে, আমি বিয়ে করেছিলাম কয়েক বছর আগে। বিয়ের পর আমাদের জীবন ভালোই ছিলো। বিয়ের দুই বছর পরই আমার একটা মেয়ে হয়। আমার বউটা আমাকে ও আমার মেয়েকে রেখে চলে যায় প্রেমিকের সাথে। আমার টাকা পয়সার অভাব ছিলো না, বউকে অনেক ভালবাসতাম। তারপরও সে পালিয়ে গেলো টাকা পয়সা নিয়ে প্রেমিকের সাথে। এখন বাচ্চাটাকে নিজেই কষ্ট করে লালন পালন করি।
প্রাচী দেখলো লোকটা এই সব বলতে বলতে কেঁদে দিচ্ছে। প্রাচী নিজেও কাঁদছে কারন কেউ ভালবাসা পায় না আর কেউ পেয়েও হারায়। সবই যে সময়ের পরিণতি। লোকটা নিজেকে শান্ত করে বলল,
- আচ্ছা, আমি যদি এখান থেকে তোমাকে মুক্ত করি তাহলে কি আমার বাসায় যাবে?
প্রাচী লোকটার কথা শুনে অবাক হয়ে বলে,
- হ্যাঁ যাবো!
- তোমাকে একটা শর্তে নিয়ে যেতে পারি?
প্রাচী কোনকিছু না ভেবেই পতিতালয় নামক জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে বলল,
- আমি সব শর্তে রাজি।
লোকটা টাকা দিয়ে প্রাচীকে পতিতালয় থেকে মুক্ত করে নিয়ে গেল তার বাসায়। প্রাচী বাসার চারদিক ঘুরে দেখতে লাগলো তখন লোকটা বলল,
- আমার শর্ত শুনবে না?
- হুম বলেন!
- আমার নাম মারুফ, এই যে বিশাল বাড়িটা দেখছো এটাই আমার। আমরা বাপ মেয়েই থাকি আর কেউ নাই দুনিয়ায়।
- হুম, এখানে কাজ করতে হবে তাই তো?
- কাজ করতে হবে না, শুধু আমার মেয়েটাকে দেখে শুনে রাখতে।
প্রাচী লোকটার কথা শুনে নিচু কন্ঠে বলল,
- আমার ছেলেকে নিয়ে আসতে পারবো?
- হুম, চলো এখনই নিয়ে আসবো!
প্রাচী আর মারুফ গেলো এতিমখানায়। ওখানে গিয়ে শুনে প্রাচীর ছেলেটা কয়েক মাস আগেই মারা গেছে। প্রাচী কান্না করতে করতে মারুফের বাসায় গেল। এখন প্রাচীর সময় কেটে যায় মারুফের ছোট মেয়েটার দেখভাল করেই।
একদিন প্রাচী মারুফের মেয়েটাকে খাবার খাওয়াচ্ছে তখন বাড়ির দারোয়ান এসে বলে,
- প্রাচী আপা, একজন লোক আসছে আপনার কাছে।
- আমার কাছে! আমার কাছে তো কারো আসার কথা না।
- কি যেনো কথা বলতে চাই!
- আচ্ছা যাও, ভাল মতো জেনে বিতরে নিয়ে আসবে।
দারোয়ান বাড়ি থেকে বের হয়ে গেইটে গেলো। এই যে সাহেব আসেন তার আগে এখানে দাঁড়ান আপনাকে চেক করতে হবে। দারোয়ান লোকটাকে চেক করে নিয়ে আসলো বাড়ির ভিতরে। প্রাচী মেয়েটাকে এখনো খাবার খাওয়াচ্ছে। প্রাচীর উল্টো দিকের রুমের দরজায় লোকটাকে দারোয়ান নিয়ে আসলো। যার কারণে প্রাচীর চেহারা না দেখেই লোকটা বলল,
- আপু, আমি অনেক দিন ধরে চাকুরী খুঁজতেছি। মারুফ স্যারের কোম্পানিতে একটা চাকুরী নেওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করতেছি। আপনি যদি স্যারকে বলে চাকুরীটা নিয়ে দিতেন অনেক উপকার হতো।
প্রাচী লোকটার কথা শুনে বলে,
- আমি চাকুরী দেওয়ার কে? আমি এখানে মেয়েটার দেখভাল করি!
- তবুও আপনি যদি একটু বলে দিতেন?
প্রাচী এবার মেয়েটাকে খাওয়ানো বাদ দিয়ে পিছনে ঘুরে তাকাল আর লোকটাকে দেখে অবাক কন্ঠে বলল,
- তুমি এখানে?
পার্ট ৬
প্রাচী এবার মেয়েটাকে খাওয়ানো বাদ দিয়ে পিছনে ঘুরে তাকাল আর লোকটাকে দেখে অবাক কন্ঠে বলল,
- তুমি এখানে?
- হুম কিন্তু তুমি এখানে! এখানেও কি পাতিতার কাজ করো?
রাজিবের মুখের কথা শুনে প্রাচী রাগান্বিত কন্ঠে বলল,
- রহিম মিয়া (দারোয়ান) কি দেখো? ওকে এখনই মেরে বের করে দাও।
- দিচ্ছি আপা,
বলেই রহিম মিয়া রাজিবের কলার ধরে ধাক্কা দিলো। রাজিব কোন রকম দারোয়ানের হাত ছুটে দৌড়ে প্রাচীর পায়ের কাছে বসে পরলো। কাঁদো কন্ঠে রাজিব বলতে শুরু করে,
- আমার চাকরী খুব দরকার, আমি ব্যবসায় অনেক লস খেয়ে পথের ভিখারি। প্রাচী তুমি একটু বললেই চাকরীটা হয়ে যাবে। আমার পরিবারের সবাই খুব কষ্টে আছে।
রাজিবের কথা শুনে প্রাচীর কোন দয়ামায়া হয়নি,
- রহিম মিয়া তোমার চাকরী কি হারাতে চাও নাকি?
প্রাচীর মুখের কথা শুনেই রহিম মিয়া রাজিবকে ধরে বাড়ির বাহিরে নিয়ে গেলো। রাজিব তারপরও বাড়ির ভিতর যেতে চাইলো তখন রহিম মিয়া আর কোন পথ না পেয়ে রাজিবকে হাতের বন্দুকটা দিয়ে কয়েকটা লাগিয়ে দিলো।
রাজিবকে মেরে বাড়ির থেকে তাড়িয়ে দিল রহিম মিয়া। রাজিব বাড়ি থেকে বের হয়ে হাটঁছে চাকুরীর খুঁজে। প্রাচী মেয়েটাকে খাবার খাইয়ে শুয়ে শুয়ে ভাবছে, মানুষের ভাগ্যের পরিণতি বুঝা বড়ই দায়।
এদিকে কয়েক মাস যেতেই সিমার বাচ্চা হওয়ার সময় হলো। আমিও সিমাকে নিয়ে চিন্তিত। একদিন সিমাকে নিয়ে দ্রুত চলে গেলাম হাসপাতালে। ডাক্তার সিমাকে অপারেশন থিয়েটারের নিয়ে গেলো আর অজ্ঞান করার ইনজেকশন দিল। সিমার বাচ্চা হওয়ার সব কিছু দেখাশোনা করছে ডাঃ জান্নাত।
সিমা অপারেশন থিয়েটারে আছে প্রায় ১ ঘন্টা ধরে, এখনো অপারেশন শেষ হয়নি। হঠাৎ ডাঃ জান্নাত হতাশা নিয়ে কেবিন থেকে বের হলো। আমি এগিয়ে যেতেই বলল,
- ইথান সাহেব, একটা দুঃসংবাদ আছে।
ডাঃ জান্নাতের কথা শুনে বুকের বিতরে প্রাণ পাখিটা ছটপট করতে শুরু করলো,
- কি দুঃসংবাদ!
- আপনার ছেলে সন্তান হয়েছে আর আপনার স্ত্রীর জরায়ুর পাশে টিউমার ধরা পড়েছে এখনি অপারেশন করতে হবে আর যদি এখন অপারেশন না করা হয় তাহলে রক্তক্ষরণ হয়ে আপনার স্ত্রী মারা যাবে।
ডাঃ জান্নাতের কথা শুনে পায়ের নিচের মাটি সরে গেল। কান্না করতে করতে ডাঃ জান্নাতকে বললাম,
- যে করে হউক আমার স্ত্রীকে বাচান।
- ঠিক আছে আপনি আমার সাথে আসুন, কিছু কাগজে সিগনেচার করতে হবে।
ডাঃ জান্নাতের সাথে গিয়ে কাগজে সিগনেচার করে দিলাম। সিমার অপারেশন শুরু করা হলো কিছুক্ষণ পরেই একজন নার্স বের হয়ে রক্তের জন্য ছুটাছুটি করতে লাগলো। সিমার জন্য A+ রক্ত ইমার্জেন্সি দরকার কিন্তু কোথাও রক্ত পাওয়া যাচ্ছে না।
আমি হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেলাম রক্তের খোঁজে, অনেক খোঁজে এক ব্যাগ রক্ত নিয়ে হাসপাতালে ফিরে আসলাম। অপারেশন থিয়েটারের সামনে দুঃখের ছায়া, আমি এগিয়ে যেতেই মা জানাই অপারেশন করার সময় সিমা রক্ত স্বল্পতায় মারা গেছে।
কথাটা শুনেই হাটু ভেঙে বসে পড়লাম, মুহূর্তেই চোখ ঝাপসা হয়ে গেল। একজন নার্স এসে, আমার ছেলেকে আমার কোলে দিয়ে গেল। ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করেই যেতেই লাগলাম, মা আর ছোট বোন অনেক বুঝানোর চেষ্টা করতে লাগলো।
অন্যদিকে হঠাৎ একদিন মারুক বাসায় ফিরার পথে গাড়ি এক্সিডেন্ট করে। কিছুক্ষণ পরই মারুফে বাসায় হাসপাতাল থেকে কল আসে। প্রাচী কলটা রিসিভ করে জানতে পারে মারুফ আর বেচেঁ নেই।
প্রায় ২ ঘন্টা পর মারুফের লাশ আনা হলো বাড়িতে, প্রাচী ভেবেই চলছে তার জীবনে ভালো সময় কেনো দীর্ঘস্থায়ী হয়না। মারুফের ছোট ভাই আর মা চলে আসলো অন্য শহর থেকে। প্রাচী জানতো না, মারুফের মা, ভাই আছে। মারুফকে মাটি দেওয়া হলে পারিবারিক করবস্থানে।
পরের দিন সকালে প্রাচী মারুফের মেয়েটাকে নাস্তা খাওয়াচ্ছে তখনই মারুফের মা এসে বলে, এই বাড়িতে কি বসে বসে খাওয়ার জায়গা! প্রাচী কোন উওর না দিয়ে মেয়েটাকে রুমে রেখে তাদের সামনে আসলো। তখন মারুফের মা আবার বলে,
- এই বাড়িতে তুমি থাকার কে? এখনই বাড়ি ছেড়ে চলে যাও।
প্রাচী কিছু বলতে যাবে তার আগেই মারুফের ভাই এসে প্রাচীকে মারতে শুরু করে। প্রাচীর চিৎকার শুনে মারুফের মেয়েটা এসে প্রাচীকে জড়িয়ে ধরলো। মারুফের মেয়েটাকে রেখে প্রাচীকে চলে যেতে বলে মারুফের মা।
প্রাচীর নামে যে ব্যাংক একাউন্ট করে ছিল মারুফ, সেটার কাগজ নিয়ে প্রাচী বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসল। প্রাচী বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা চলে গেলো ব্যাংকে। প্রাচী কিছু না জেনেই একাউন্ট থেকে ১০ হাজার টাকা তুলে, চলে গেলো একটা বস্তিতে।
প্রাচী বস্তিতে একটা ছোট ঘর ভাড়া নিলো। প্রয়োজনীয় সব কিনে আনার আগেই টাকা শেষ। প্রাচীর মনে পরলো একাউন্টে কত টাকা আছে তা জানা হলো না। পরের দিন প্রাচী একটা চেক লিখে নিলো ২০ হাজার টাকার। ব্যাংকে গিয়ে টাকাও পেয়ে গেলো।
প্রাচী টাকা হাতে পেয়ে ম্যানেজারকে বলে, এই একাউন্টে কত টাকা আছে। ম্যানেজারের কথা শুনে প্রাচী বিশ্বাস করতে পারছে না, মারুফ গত ১ বছরে তার নামে ৫০ লাখ টাকা রাখছে। প্রাচী হাতে আলাদিনের প্রদীপ পাওয়ার মতো অবস্থা। প্রাচী ঘরে ফিরে, বসে ভাবতে লাগলো কি করে নিজের পায়ে দাঁড়ানো যায়।
এদিকে সিমার মৃত্যুর কয়েকদিন পরই আমার ছেলেটা বিষণ অসুস্থ হয়ে পরে। ডাক্তার ছেলেটাকে ভালো করে পরীক্ষা করলো। রিপোর্ট হাতে নিয়ে ডাক্তার বলল,
- ইথান সাহেব, আপনার ছেলেটার রক্তে একটা রোগ ধরা পরেছে।
- ওর কি হইছে!
- আপনার ছেলের ব্লাড ক্যান্সার।
কথাটা শুনা মাত্রই মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পরলো,
- ভালো হবে না?
- আমার এক বন্ধু ডাঃ রিয়াজ তার কাছে যান ঠিকানা দিয়ে দিচ্ছি।
ঠিকানা নিয়ে পরেরদিন ডাঃ রিয়াজের কাছে গেলাম। ডাঃ রিয়াজ কয়েকদিন চিকিৎসা করার পর হঠাৎ ছেলেটা মারা গেলো। আমি বুঝতেই পারছিনা আমার সাথে কেনো এমন হচ্ছে! এ কোন পাপের শাস্তি ভোগ করছি আমি!
চলবে
_________
গল্পঃ পরিণতি
পর্বঃ ৭
লেখাঃ কামরুল ইসলাম ইথান
আমি বুঝতেই পারছিনা আমার সাথে কেনো এমন হচ্ছে! এ কোন পাপের শাস্তি ভোগ করছি আমি! এটা কি প্রাচীর সাথে করা অন্যায়ের কর্মফল, প্রাচী কেমন আছে এখন! প্রাচীর কি আমার কথা মনে পরে? আমি যদি সেদিন ভার্জিন না খুঁজতাম তাহলে হয়তো এখন জীবনটা অনেক রঙিন থাকতো।
এখন আমি বড় একা, প্রাচীর কথা খুব মনে পড়ে। প্রাচীর সাথে করা খারাপ ব্যবহার গুলো মনটাকে কুঁড়ে খায়। এখনো প্রাচীকে প্রায় খুঁজি কিন্তু ভাগ্য প্রাচীর সন্ধান দেয় না।
অন্যদিকে প্রাচী অনেক ভেবে চিন্তে সেই টাকা দিয়ে একটা ছোট গার্মেন্টস দিলো, তাতে কয়েকটা মেশিন ও লোক নিয়ে ব্যবসা শুরু করলো। কয়েক মাস পরই ব্যবসায় অনেক লাভ হতে শুরু করে, প্রাচীও লাভের টাকায় গার্মেন্টস বড় করতে থাকে। ধীরে ধীরে প্রাচীর বাড়ি গাড়ি সবই হতে লাগলো।
এদিকে আমার হঠাৎ করেই চাকরী চলে যায়। আমার কাছে তেমন জমানো টাকাও ছিল না তাই ঘরে অভাব অনটন দেখা দেয়। চাকরীর জন্য অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হলাম, বাধ্য হয়ে ঢাকা শহরে চলে আসি।
একটা মেসবাড়িতে অনেক কষ্টে থাকার ঠায় করলাম। প্রতিদিন চাকরীর খুঁজে বেরিয়ে যেতাম কিন্তু কোথাও চাকরী হতো না। বুঝতে পারলাম, চাকরী পেতে হলে বাবার টাকা নয়তো মামা-চাচার ক্ষমতা থাকাটা বাধ্যতামূলক এখানে সার্টিফিকেট কোনো বিষয় না।
একদিন এক কম্পানিতে ম্যানেজার পদের জন্য ইন্টারভিউ দিতে গেলাম। ইন্টারভিউ রুমে ঢুকে সামনে যাকে দেখলাম, সে আর কেউ না প্রাচী! অবাক নয়নে প্রাচীর দিকে তাকিয়ে রইলাম, নিজের চোখের দেখাকে বিশ্বাস করতে পারছিনা। প্রাচীকে দেখে খুশি হবো নাকি প্রাচীর অবস্থান দেখে অবাক হবো কিছুই মাথায় ঢুকছে না! আমি অবাক কন্ঠে বললাম,
- প্রাচী তুমি এখানে?
ফাইল দেখা বাদ দিয়ে প্রাচী আমার দিকে ফিরে তাকাল আর অবাক চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,
- এটা অফিস! এটা কারো বাসা বাড়ি না, আশা করি আপনি আমার কথার মানে বুঝতে পেরেছেন।
প্রাচীর কথা শুনে কিছুটা কষ্ট পেলাম! মুচকি হেসে বললাম,
- সরি মেম!
- হুম এবার ঠিক আছে, আপনি কি চাকরীর জন্য এসেছেন?
- জ্বি, আমার একটা চাকরী খুব দরকার।
- দেখি আপনার CV.
প্রাচী আমার CV কিছুক্ষণ দেখে বলে, আপনি এখন আসতে পারেন আপনাকে কল দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে চাকুরীটা হবে কিনা। প্রাচীর কথা শুনে মুচকি হেসে চলে আসতে যাব কিন্তু নিজের বিবেক বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো। প্রাচীর দিকে করুণ নয়নে তাকিয়ে বললাম,
- আমার ছেলেটা কেমন আছে?
প্রাচী আমার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে বলল,
- ও আপনার ছেলে ছিল না!
- ও আমার নিজের ছেলে ছিল। বিয়ের আগে সেই কলঙ্কিত রাতে তোমার জীবনে যে এসেছিল সে আর কেউ না আমি! আমিই সেদিন তোমাকে কলঙ্কিত করে ছিলাম, তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য তোমাকে অনেক খুঁজেছি কিন্তু কোথাও পেলাম না।
আমার কথা শুনেই প্রাচী চেয়ার থেকে উঠে এসে ঠাস করে আমার গালে চড় বসিয়ে দিল আর রাগান্বিত কন্ঠে বলল,
- শুধু তোমার জন্যই আমার সুন্দর জীবনটা নষ্ট হয়ে গেছে। তুমি আমার চোখের সামনে থেকে চলে যাও আর কখনোই এখানে আসবে না।
গালে হাত দিয়ে প্রাচীর কেবিন থেকে বেরিয়ে আসতে যাব তখনি প্রাচী আবার বলে,
- আমাদের ছেলেটা মারা গেছে আর ওর মৃত্যুর জন্য তুমি দায়ী।
প্রাচীর কথা শুনে চোখ ঝাপসা হয়ে গেল। নিজেকে আজ বড় অপরাধী মনে হচ্ছে, চোখের পানি মুছে প্রাচীকে বললাম,
- আমি জানি ক্ষমা চাইলে এখন আর আগের মতো কিছুই ঠিক হবে না তবুও তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, যদি পারো এই অমানুষটাকে ক্ষমা করে দিও।
বলেই প্রাচীর কেবিন থেকে বেরিয়ে চলে আসলাম, আমি জানি প্রাচীর এখানে আমার মতো কোনো অমানুষের চাকরী হবে না। বিকালে বসে আছি এমন সময় একটা কল আসে, কলটা রিসিভ করে জানতে পারলাম প্রাচীর ওখানে আমার চাকরী হয়ে গেছে। রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছি, প্রাচী তার চোখের সামনে থেকে চলে যেতে বলেছিল তবে প্রাচী কেনো আমাকে চাকরী দিল!
কয়েকদিন পরেই প্রাচীর অফিসে জয়েন করলাম। অফিসের কাজ ছাড়া প্রাচী আমার সাথে তেমন কথা বলে না, আমি কথা বলতে চাইলে কোনো গুরুত্ব দেয় না। প্রাচীর এমন ব্যবহার আমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছিল, প্রাচীকে করা আমার অবহেলা আর অপমানের কথা।
একদিন অফিসের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিলাম এমন সময় প্রাচী এসে বলে,
- এটা অফিস, সিগারেট খাওয়ার জায়গা না!
- সরি মেম!
- তা সিগারেট খান কেনো? আপনার স্ত্রী কি খুব চাপে রাখে নাকি?
- স্ত্রী নাই!
- কেনো, বিয়ে করেননি নাকি?
- বিয়ে করেছিলাম, সে মারা গেছে মাস ছয়েক আগে।
- ওহ, আচ্ছা আপনি আপনার কাজে যান আর সিগারেট বেশি খাবেন না।
বলেই প্রাচী চলে গেল। আমার সাথে প্রাচীর অপরিচিত ব্যবহার হউয়ারি কথা, প্রাচী এখন কম্পানির মালিক আর আমি তার কর্মচারী। মাঝে মাঝে প্রাচীর দিকে দূর থেকে তাকিয়ে আর প্রাচীর সাথে করা অবহেলার কথা মনে করি। নিয়তির বিধান বুঝা বড়ই কঠিন, কার জীবন কখন তিনি পরিবর্তন করে দিবে বুঝা বড় দায়।
অফিস থেকে বের হয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলাম এমন সময় একটা গাড়ি এসে ধাক্কা মারে! আমি রাস্তার পাশে পরে গেলাম, চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল কিছু মানুষের হইছই কানে ভেসে আসছিল তারপরে আর কিছু মনে নেই।
যখন জ্ঞান ফিরে তখন নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করি। আমার পাশেই প্রাচীকে বসে থাকতে দেখে অবাক হলাম! আমি উঠে বসতে যাব তখনি প্রাচী বলে উঠল,
- আরে আরে কি করছো,
বলেই প্রাচী আবার আমাকে শুয়ে দিল। আমি শুয়ে প্রাচীকে অপলকে দেখতে লাগলাম, প্রাচীর চোখ দুটা লাল হয়ে আছে। নিরবতা ভেঙে আমি বললাম,
- আমি এখানে কি করে আসলাম?
- তুমি কি করে আসবে! তোমাকে এখানে নিয়ে আসা হয়ছে আর একটু হলেই তো মরে যেতে।
- তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি, আমার মরে যাওয়াই উচিত ছিল।
মৃত্যুর কথা শুনেই প্রাচী আমার মুখ চেপে ধরলো আর বলল,
- মরার কথা আর কখনো বলবে না! আমার সাথে যা হয়েছে এটা আমার ভাগ্যে ছিল, ভাগ্য আমাদের সাথে এক আজব খেলা খেলছে এতে তোমার কোনো দোষ নেই।
প্রাচীর কথা শুনেই বুঝতে পারলাম, আমার জন্য একটু হলেও তার মায়া হয়। দুজনেই চুপচাপ বসে আছি নিরবতা ভেঙে প্রাচী বলল,
- আচ্ছা, আমি যদি তোমার কাছে ফিরে আসতে চাই তবে কি আমায় গ্রহণ করবে?
আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম,
- না কারণ আমি তোমার যোগ্য না।
প্রাচী আমার কথা শুনে মায়াবী চোখে তাকিয়ে বলল,
- চলোনা দুজনে আবার নতুন করে জীবনটা শুরু করি?
সেদিন প্রাচীর চোখে আমার জন্য গভীর ভালোবাসা দেখে ছিলাম। হাসপাতালে আমি ২ দিন ছিল, এই দুই দিন প্রাচীর সাথে অনেক পুরাতন কথা শেয়ার করেছিলাম। আমার আর সিমার বিয়ে, বাচ্চা ছেলেটা ব্লাড ক্যান্সার আমার বন্ধু সুমনের অকাল মৃত্যু সব কিছু প্রাচীর কাছে বলেছিলাম। প্রাচীও তার পতিতালয় থেকে শুরু করে সব কিছুই আমার সাথে শেয়ার করলো।
আমি আর প্রাচী আজ দেশের বাড়ির উদ্দ্যশে রওনা দিলাম। ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ যাত্রাপথে দুজনে চিন্তা করলাম, বাড়ি গিয়ে দুই পরিবারকে একত্র করে দুজনে আবার বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হব।
লেখকঃ কামরুল ইসলাম ইথান
সমাপ্ত
0 Comments:
Note: Only a member of this blog may post a comment.