Thursday, April 24, 2025

ভালোবাসা রং বদলায় - আত্নকাহিনী | valobashar rong bodlay

আরিফ নামের এই লোকটার সাথে আমি প্রায় দেড় বছর যাবত আছি। যদিও আমি তার বিয়ে করা বউ না। সে আমাকে কিনে নিয়েছিলো মাত্র কিছু টাকার বিনিময়ে। প্রথমদিকে তার পরিবারের কেউ জানতো না আমার ব্যাপারে। সে তখন সবাই ঘুমিয়ে গেলে রাতের বেলা লুকিয়ে লুকিয়ে আমার কাছে আসতো। তার চাহিদা পূরণ হয়ে গেলে আবার চলে যেত। প্রথম প্রথম খুব ঘেন্না লাগতো আমার। কিন্তু আমার করার কিছুই ছিলো না! কারণ, আমি ছিলাম ওর কেনা একজন দাসী মাত্র।

ভালোবাসা রং বদলায় - আত্নকাহিনী | valobashar rong bodlay


আমার স্পষ্ট মনে আছে, সেদিন ছিলো ১৪ই এপ্রিল। সেদিনই ছিলো তার সাথে আমার প্রথম ঘুরতে যাওয়া। তার সব বন্ধুদের সাথে আমায় পরিচয় করিয়ে দিলো। আরিফের মতো ওর বন্ধুগুলোও আমার গায়ে হাত দিতে লাগলো। কেউ বললো, "কি জিনিস মাইরি! চোখগুলার মতো বডিও তো ঝিলিক মারতেছে। " আবার কেউ বললো,"কম দাম দিয়ে ভালো জিনিস পাইছিস। মাঝে মাঝে নিয়ে আসিস। আমরাও একটু দেখবো নে। কি বলিস?"আরিফ হঠাৎ করেই ওর বন্ধুদের কাছ থেকে প্রায় আমায় ছিনিয়ে নিয়ে বললো,"এইটা আমার বউ। কেউ গায়ে হাত দিয়ে কথা বলবি না। দেখার হলে দূর থেকে দেখ। নজর দিবি না।" আমি তার বিয়ে করা বউ না, অথচ সে সবাইকে বললো আমি নাকি তার বউ! খুব অবাক হয়েছিলাম সেদিন। আগে নিজেকে তুচ্ছ, নর্দমার মতো লাগতো। কিন্তু সেদিন তার মুখ থেকে এ কথা শোনার পর তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা অনেকাংশেই বেড়ে গিয়েছিলো! হয়তো সেদিন থেকেই ভালোবাসতে শুরু করেছিলাম ওকে।

.

আস্তে আস্তে কখন যে আমরা এত ঘনিষ্ঠ হয়ে গেলাম বুঝতেই পারি নি। ও গায়ে হাত দিলেও আর খারাপ লাগতো না। বরং অপেক্ষায় থাকতাম, কখন রাত হবে আর কখন ও আমার কাছে আসবে। 

.

শুধুমাত্র রাতের জন্য আমি ওর, এই ব্যাপারটা আমি মেনে নিতে পারছিলাম না। আরিফ আমায় প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলেছিলো। আমি ওকে যতটা ভালোবাসতাম, তার থেকেও অনেক গুন বেশি ভালোবাসা ও আমায় দিয়েছিলো। আমায় কখনো কষ্ট দিতো না ও। ভালোবাসার অভাবও ছিলো না কোনো। শুধু ছিলো একটাই দুঃখ। ও আমাকে পারিবারিক স্বীকৃতি দিতে পারে নি। ওর বাসা থেকে অবশ্য সন্দেহ করছিলো। এভাবে লুকিয়ে আর কত দিনই বা থাকা যায়।

একদিন ওর মা ওকে ফলো করে। আমরা হাতেনাতে ধরা পরে গেলাম। শুরু হয়ে গেলো অশান্তি। ওর মা বলতে লাগলো,"কুলাঙ্গার জন্ম দিয়েছিলাম আমি। নিজেকে তোর মা হিসেবে পরিচয় দিতেও লজ্জা হচ্ছে আমার। তোর পেছনে তোর বাবা এত টাকা খরচ করছে,এই দিন দেখার জন্য? এরকম নীচ কাজ করতে লজ্জা করলো না তোর?" আরিফের মা ওর বাবাকেও বিষয়টা জানিয়ে দিলো। সেদিন ওকে ওর বাবা-মা অনেক কথা শোনায়। সমাজে মুখ দেখানোর জায়গা রইলো না আর। অবশ্য তাদেরই বা কি দোষ দেবো? এরকম একটা বিষয় কি মানা যায়? সমাজে মুখই বা দেখাবেন কি করে! উনারা আমাকে সেদিন কিছুই বলেন নি। আমি চুপচাপ ছিলাম। বাবা-মা যখন আরিফকে অনেক বেশি কথা শুনিয়ে ফেলেছিলো, তখন ও আচমকা বলে উঠলো," আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না। জেনে গেছো ভালো করেছো। একদিন না একদিন তো জানতেই। ভালোই হয়েছে। এতদিন লুকিয়ে লুকিয়ে ওর কাছে যেতাম, এখন আর কোনো লুকোচুরি নয়। এটা বলেই ও আমাকে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। "

.

উনারা শুধু স্তব্ধ হয়ে শুনলেন ওর কথা। তারপর আর কিছু বললেন না। মেনে নিলেন আমাদের। কারণ, লোক হাসানোর চাইতে মেনে নেয়াই ভালো।

.

উনারা আরিফের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলেন। বন্ধ করবেন না-ই বা কেন? এভাবে সারাদিন চোখের সামনে একটা মেয়েকে নিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে থাকলে, সেটা কোন বাবা-মা সহ্য করতে পারে? কেউ পারবে না। অবশ্য তাতে আরিফের কোনো আফসোস হলো না। ও ওর মতোই সারাদিন দরজা বন্ধ করে আমার সাথেই থাকতো। আমি ওকে কখনো কিছু বলি নি। কারণ, আমি ওর বউ না। আমি শুধুমাত্র ওর টাকা দিয়ে কেনা একটা দাসী মাত্র। যদিও আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসতাম কিন্তু মুখে কখনো প্রকাশ করি নি। আমি লজ্জায় আর ও আত্নসম্মানবোধের জন্য।

.

একসময় পরিবারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেলো। আরিফের বাবা-মা বুঝে গেলেন এই পরিস্থিতিতে ছেলেকে কিছু বললে আরও বিগড়ে যেতে পারে। যেহেতু সে ছিলো তাদের একমাত্র সন্তান। 

.

তবে নির্যাতন শুরু হলো আমার উপর। যে কোনো কিছুতেই দোষ আমার ঘাড়েই পরতে লাগলো। উঠতে, বসতে, খেতে, ঘুমাতে সব সময় তারা আমাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করতো। আর করবে না-ই বা কেন? আমার মতো মেয়েদের জন্মই হয়েছে অন্যদের বঞ্চনা সহ্য করার জন্য। নিজেকে দোষী মনে হয়। কিন্তু আমারই বা কি করার আছে? কি করতাম আমি? আরিফকে তো ভালোবাসি। ওকে ছেড়ে তো আর থাকতে পারবো না। তাই সব সহ্য করা ছাড়া আমার কোনো উপায় ছিলো না।

.

কিন্তু আস্তে আস্তে এখন আমি আরিফেরও বিরক্তির কারণ হয়ে উঠেছি। ও আমাকে সহ্য করতে পারে না কেন জানি। হয়তো আমি পুরান হয়ে গেছি তাই। রাগ উঠলেই আরিফ আমায় মারধোর করে এখন। কিছু হলেই ও আমাকে আছড়ে মাটিতে ফেলে দেয়। মাঝে মাঝে অজ্ঞানও হয়ে যাই। জায়গায় জায়গায় মার খাওয়ার দাগ এখন আমার শরীরে। পারিবারিক অশান্তি ও আর মেনে নিতে পারছে না হয়তো। আর নয়তো নতুন কারোর প্রেমে পড়েছে। হয়তো আমার ওকে বোঝার ভুল ছিলো। ও হয়তো আমায় কখনো ভালোইবাসে নি। শুধু নিজের চাহিদা মেটাবার জন্য আমায় রেখে দিয়েছিলো। আমি বুঝতেই পারি নি। ওর এমন ব্যবহারে আমার খুব কষ্ট হয়। কিছু বলতে পারি না। ভালোবাসি যে! আর আমার মতো মেয়েদের মুখ ফুটে কিছু বলতেও নেই।

.

একদিন ও কার কাছে যেন আমায় নিয়ে গেলো। আমাকে অন্য একটা লোকের কাছে তুলে দিলো ও!! বিনিময়ে মাত্র ২ হাজার টাকা নিলো। ওর লাস্ট কথা যেটা আমি শুনতে পেয়েছিলাম তা ছিলো,"ভাই, এই ফোনের মতো ফোন হয় না। নিজে একবার ইউজ করে দেখেন। আমি দেড় বছর যাবত চালাইছি। কোনো প্রব্লেম হয় নাই। টাকার দরকার, তাই বিক্রি করলাম। আরেকটা নতুন ফোন কিনবো।"

(গল্পটি টি ফেসবুক থেকে সংগৃহীত : লেখকের নাম জানা নেই)


Previous Post
Next Post

post written by:

0 Comments:

Note: Only a member of this blog may post a comment.