আমার আসল পরিচয় জানার আগে নিজের মায়ের কথা ভাবুন। কারন তার দম প্রায় বন্ধ হয়ে আসছে।পুনরায় অট্রো হাসিতে মেতে উঠেছে মাইশা। অন্ধকার বাড়িটা দ্বী গুন ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। নিরব শেখ বুঝতে পারলেন তাঁর মায়ের বিপদ রয়েছে। গাল বেয়ে টপ টপ করে ঘাম ঝরছে। তাঁর ভিতরে প্রচন্ড উত্তেজনা কাজ করছে ।
"_তুমি আমার মায়ের সাথে কী করেছো ? দোহায় তোমার, আমার মায়ের কোনো ক্ষতি করো না।
আর্তকন্ঠে একই কথা বলে যাচ্ছেন বার বার। কিন্তু এতেও মাইশার মনে কোনো মায়া হলো না। তার অট্রো হাসি না থামিয়ে আরো দ্বী গুন বাড়িয়ে দিলো।
নিরব শেখ হাত জোর করে বসে পড়েন মাইশার সামনে। নিরবের কান্ড দেখে মাইশা আরো বেশি খুশি হয়েছে ।
হঠাৎ পাশের রুম থেকে আর্তচিৎকারের আওয়াজ নিরব শেখের কানে পৌঁছায় । এটা তাঁর মা জুলেখা বেগমের চিৎকার । নিরব কোনো দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে সোজা আওয়াজের উৎস খুঁজতে থাকে। আওয়াজ টা পাশের একটা ছোট রুম থেকে আসছে। রুমটা বেশ পুরনো। কয়েক যুগ আগে থেকেই এই ঘরে কেউ আসে না। চলিত আছে এই ঘরে নাকি নিরবের দাদু ছবি আঁকতেন। তাই দাদুর মৃত্যুর পর বন্ধ পরে আছে ঘরটা। নিরব দ্রুত গতিতে ঘরের দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করেন । চারিদিকে কেমন বিদঘুটে গন্ধ। এই গন্ধ আগেও কোথায় পেয়েছিলেন তিনি। হঠাৎ মনে পরে গতরাতের কথা। হুম গত রাতে রোহানের ঘরের আশে পাশে তিনি এমন বিদঘুটে গন্ধ আবিষ্কার করেছিলেন।
চারিদিকে চাক্ষুষ করছিলেন নিরব শেখ। না ঘরের মধ্যে কাউকে দেখা যাচ্ছে না। তবে সেই আর্তচিৎকার কোথা থেকে এলো।
শরীরের প্রতিটি শিরা-উপশিরার র'ক্ত টগবগ করছে নিরব শেখের। যে করেই হোক মায়ের কোনো ক্ষতি হতে দিবেন না তিনি। কিন্তু তাঁর আগে মায়ের খোঁজ তো মিলতে হবে।
হঠাৎ নিঃশ্বাস ফেলার শব্দে নিরব শেখ ভয়ে ঠান্ডা হয়ে যান। হয়তো কেউ আছে এই ঘরটাতেই ।
"_মা , ও মা , আমি নিরব! তুমি এখানে আছো কী?
অশ্রু সিক্ত নয়নে আর্তকান্না ভরা কন্ঠে বার বার একই শব্দ উচ্চারণ করছিলেন নিরব শেখ।
"_নিরব!!
রোগাক্রান্ত কন্ঠে ফিসফিসিয়ে জুলেখা বেগমের ডাক। নিরব মূহুর্তে ঘুরে দাঁড়ায় । জানালার পাশে সিলিং এ ঝুলছে মায়ের অর্ধ মরা দেহ। নিরব বিকট চিৎকারে ভেঙ্গে পড়েন । দৌড়িয়ে মায়ের কাছে চলে আসেন ।
"_মা ভয় পেয়েও না , তোমার কিছু হবে না। আমি চলে এসেছি তো।
কান্না জড়িত কন্ঠে নিরব শেখ জুলেখা বেগমকে সাহস দিতে লাগলেন। পরমূহর্তে নিরব শেখ খেয়াল করেন মায়ের দেহ ঠান্ডা হয়ে গেছে। শ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে। হাত পা ছেড়ে দিয়েছেন জুলেখা বেগম ।
আঁকাশ ফুরানো চিৎকারে ফেটে পড়েন নিরব শেখ। চোঁখের সামনে মায়ের মৃত্যু যেনো তাঁর মৃত্যুর স্বাদ।
"_আপন জন হারালে কেমন লাগে এবার বুঝতে পারছেন তো মিঃ আরিফ। হুম আমি আপনাকে আর নিরব বলবো না। কারন সত্যি লুকানোর মানুষ যে আর বেঁচে নেই আপনার।
মাইশার এমন কথায় ঘুরে তাকান নিরব শেখ। তিনি বুঝতে পেরেছেন এতক্ষণে, এটা মাইশা নয়।
"_মিতু !
ভ্রু কুঁচকে অবাক সূচক প্রশ্ন ছুঁড়লেন তিনি।
"_বাহ্ নামটা দেখছি ভালোই মনে আছে আপনার।
ঠোঁটের কোণে বিরক্তিকর হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে মাইশা রূপী মিতু। নিরব শেখের মনে পড়ে আজ থেকে কয়েক বছর আগের কথা।
সময়টা ২০১৬ সাল ।
বাসর ঘরে বধু সেজে গুটিসুটি মেরে বসে আছে মিতু। সৎ মায়ের জোরাজুরিতে এক ভিন দেশী লোকের সাথে বিয়ে হয়েছে তার। কথা হয়েছে বিয়ের পর মিতু কে নিয়ে বিদেশে চলে যাবেন উনি। লোকটার নাম অরিফ, শুনেছে সে মায়ের কাছে। হ্যাঙলা গড়নের বেশ ফর্সা লোকটা। মিতুর সৎ মা কে টাকার লোভ দেখিয়ে রাজি করিয়ে ফেলেন তিনি। কিন্তু মিতু তো অন্য একজনকে ভালোবাসে । ছেলেটার নাম সবুর। মিতুকে সেও ভিষন ভালোবাসে । টাকার কাছে বিক্রি হয়ে সৎ মেয়েকে জোর পূর্বক বিয়ে দিয়ে দেন সৎ মা আম্বিয়া বেগম।
সবুর প্রিয় মানুষ কে না পাওয়ার ব্যথা সহ্য করতে না পেরে কোথাও হারিয়ে গেছে। হয়তো আত্মহত্যা বেছে নিয়েছে। না হয় অনেক দূরে চলে গেছে যেখানে তাকে কেউ খুঁজে পাবে না।
সবুরের কথা মনে পড়তেই দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মিতু।
অচেনা বাড়ি অচেনা মানুষ জন। আর মানুষ জন বলতে তিন জন লোককেই চোখে পড়েছে মিতুর। বেশ ঘাবড়ে আছে সে। খানিক বাদে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে আরিফ।
মিতু ঘাড় উঁচিয়ে দেখে আরিফের সাথে বাকি তিন জনও আছে। কিন্তু সে মায়ের কাছে শুনেছে বাসর রাতে নাকি শুধু স্বামী স্ত্রী থাকেন।"_ তবে কেনো এই তিন জনও এলো উনার সাথে। হয়তো মা মিথ্যা বলেছে।
সহজ সরল মিতু চুপটি মেরে বসে আছে খাটের এক কোনায়। আরিফ ধীর গতিতে কাছে গিয়ে বসে। ভ্রু কুঁচকে তাকায় মিতুর দিকে। তখনো সব অজানা মেয়েটার কাছে। তার সাথে কী ঘটতে চলেছে তার ভাবনার বাইরে।
হঠাৎ মিতু খেয়াল করে সাথে থাকা লোকগুলোও একে একে মিতুর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। মিতু এইবার খানিক ঘাবড়ে গেল।
আরিফ পর মূহুর্তে টান দিয়ে মিতুর দু পাট্টা কেড়ে নিলো। অসহায়ের মত তাকিয়ে আছে মিতু। তবে কী তার সৎ মা জেনে শুনে মিতু কে এদের হাতে তুলে দিয়েছে?
মিতুর চোখের কোণে পানি জমে গেছে।
সাথে আসা দুজনে দ্রুত গতিতে মিতুর দুই হাত ধরে বিছানায় শুইয়ে দিলো। মিতুর আর্তচিৎকার জানালার সচ্ছ কাচে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসছে বার বার।
পালাক্রমে ধ'র্ষ'ণ করতে লাগলো অবলা মিতু কে। র'ক্তা'ক্ত শরীরে ছটফট করতে লাগলো সে। কারো দয়া হলো না সে দিন। খায়েশ মিটিয়ে অচেতন মিতুকে ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করে তাঁরা।
আজ কেটে গেছে কয়েক বছর। মিতুর এখনো বেশ ভালো মনে আছে আরিফের চেহারা।
নিরব শেখ বড় করে ঢোক গিলেন । সেদিনের আরিফ তো তিনিই ছিলেন । কিন্তু মিতুর চেহারার এত পরিবর্তন কিভাবে হলো এখনো অজানা নিরব শেখের কাছে।
"_মিতু তুমি এখনো বেঁচে আছো?
অবাক সূচক প্রশ্ন ছুঁড়ছেন নিরব শেখ।
"_ হ্যা আমি এখনো বেঁচে আছি । তোদের সবাই কে শেষ করবো। কাউকে বাঁচতে দিবো না। তোদের জন্য আমার সবুর কে মরতে হয়েছে। আমি হয়েছি ধ'র্ষি'তা। সেদিন তোর ভাইয়ের রুমে যেই মেয়েকে দেখেছিস ওটা আমি ছিলাম না। ওটা তো রোহানের প্রেমিকা যাকে আমিই ডেকে এনেছিলাম সেদিন রাতে। আমি তোকে একধরনের ডার্গ দিতাম যেনো আমার প্রতিবিম্ব সব মেয়ের মধ্যে দেখতে পাস। আর রোহানের দরজায় যেই তরলটা লাগানো ছিলো ওটা একটা পয়জন। যেটা মানুষের শরীরে ঘামের সাথে প্রবেশ করে তাকে দ্বী গুন উত্তেজিত করে দেয়।
নিরব শেখ বুঝতে পারে সব কথা।
"_তুই আমার পরিবার কে শেষ করেছিস আমি তোকে ছাড়বো না।
বলতে বলতে তেড়ে আসছেন নিরব শেখ। মিতুও তৈরি আছে। রাম দা হাতে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিরব শেখের দিকে। কাছে আসতেই বিকট আওয়াজে গর্জে উঠে মিতু। নিরব শেখের শরীর থেকে মাথা আলাদা হয়ে ছিটকে পড়ে ফ্লোরে।
বড় বড় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মিতু। এখনো রাগে ফুঁসছে তার শরীর। মাথা বিহীন ম'রদে'হ পড়ে আছে এক পাশে। র'ক্তে'র বন্যা বয়ে যাচ্ছে শেখ বাড়ির উঠোন।
"_হ্যালো মিঃ বোরহান!
মেয়ে কন্ঠ শুনেই চোখ জ্বল জ্বল করে উঠে বোরহানের ।
"_জ্বী কে বলছেন?
একটু ভাব ভঙ্গিতে উত্তর দেয় বোরহান।
"_ আমি মাইশা! হয়তো চিনবেন না। আসলে আমি আপনাকে পছন্দ করি । আগামীকাল রাতে কী সুইট ড্রিম হোটেলে মিট করতে পারবেন আমার সাথে?
অচেনা মেয়ের এমন প্রস্তাবে লাফিয়ে উঠে বোরহানের মন । মেয়ের নেশা বড়ই মারাত্মক।
"_যত টাকা যাবে যাক এই মেয়েকে আমার ভোগ করতেই হবে।
কল কেটে ঠোঁটের কোণে পৈচাশিক হাসি হেসে পরের শিকারের অপেক্ষায় রয়েছে মাইশা।
লেখকঃ আরিফ ইসলাম (সংগৃহীত)
0 Comments:
Note: Only a member of this blog may post a comment.