মধ্যরাতে নিজ স্ত্রীকে অর্ধন'গ্ন অবস্থায় ছোট ভাইয়ের রুমের দিকে যেতে দেখে বেশ চমকে উঠেছেন নিরব শেখ। অবাকের বিষয় হলো খানিক আগেও স্ত্রী মাইশা কে নিজ কক্ষে ঘুমান্ত অবস্থায় দেখে এসেছেন তিনি। তবে ছোট ভাই রোহান শেখ বাড়িতে আসতেই মাইশার মাঝে বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করছেন তিনি।
পা টিপে টিপে রোহানের কক্ষের দিকে অগ্রসর হন নিরব শেখ। ঘুটঘুটে অন্ধকারে সারা বাড়িটা কেমন নিশ্চুপ নিরবতায় ছেয়ে গেছে। চাঁদের হালকা আলো এসে পড়েছে ঘরের ভিতরে। রোহানের কক্ষের সামনে আসতেই কেমন এক বিদঘুটে গন্ধ নাকে এসে লাগে নিরব শেখের। সাথে গোঙানির আওয়াজ। মাইশা ততক্ষণে তার চক্ষুগোচর হয়ে গেছে। দরজায় হাত রাখতেই ভেজা তরলে হাত ভিজে গেলো নিরব শেখের । অন্ধকার বিধায় বুঝা যাচ্ছিল না সেগুলো কী ছিলো। দরজা ঠেলে ভিতরে উঁকি দিতেই থ মেরে যান নিরব শেখ। আবছা আলোয় দেখতে পান রোহান এবং মাইশা শারীরিক স'ম্প'র্কে লিপ্ত রয়েছে। হৃদস্পন্দন বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে তার। কাঁপা কাঁপা শরীরে হাতের তালু দিয়ে কপালের ঘাম মুছে যাচ্ছেন বার বার।হৃদ পিন্ড ধুক ধুক করছে । নিজের চোখ কে যেনো বিশ্বাস করতে পারছেন না তিনি। চোখে তাঁর অগ্নি শিখা ফুলকি ছড়াচ্ছে ।
বংশ পরিচয় হীন মাইশা কে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন । আজ নিজ ভালোবাসার মানুষটি তাকে এভাবে ঠকাবে নিরব শেখের কল্পনার অতীত।
এখন কী করা উচিত ভাবতে পারছেন না তিনি। প্রচন্ড ধাক্কায় দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করেন । নিরব শেখের উপস্থিতি টের পেয়ে লাফিয়ে উঠে মাইশা এবং রোহান।
"_যার সুখের জন্য এতটা বছর প্রবাস জীবন পার করলাম সেই এমন কী করে করতে পারলো? যেই ছোট ভাইকে কষ্ট করে লেখা পড়া করালাম, সে এমন টা করলো কিভাবে? এই বিশ্বাস ঘাতকদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই। এদের পৃথিবীতে রাখলে আসল ভালোবাসা বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
রাগে নিরব শেখের পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে। টেবিলে থাকা ফল কাঁটার ছুড়ি দিয়ে একনাগাড়ে ছুরিঘাত করতে থাকেন তিনি। তাদের কোনো কথা বলার সুযোগ দিলেন না নিরব শেখ। সারা ঘর ময় র'ক্তে'র নদী বয়ে যাচ্ছে। দুটি তাজা নি'ষ্প্রান দেহ ফ্লোরে উপুড় হয়ে পড়ে আছে।
নিজ হাতে লা'শ দুটি বস্তা ব'ন্দি করে টানতে টানতে বাড়ির বাইরে নিয়ে যান তিনি। বেশ খানিকটা দূরে একটা স্রো'তধারায় বস্তা দুটি ফেলে দেন।
বাড়িতে ফিরে হতাশ হয়ে বারান্দায় ধপ করে বসে পরেন নিরব শেখ। চোখ বেয়ে অ'শ্রু টপ টপ করে ঝরছে। নিজ হাতে স্ত্রি এবং ভাইকে খু'ন করেছেন তিনি। ভাবতেই কষ্টে বুক ফেটে চিৎকার আসছে।
পূর্ব আকাশে সূর্য উঁকি দিচ্ছে। হয়তো কিছুক্ষণ পরেই আজান পরে যাবে। চোখের পানি মুছে নিজ কক্ষের দিকে অগ্রসর হন নিরব শেখ।
দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করতেই সারা দেহে ভয়ের শিহরণ জেগে উঠে। বিছানায় চোখ পড়তেই দেখেন মাইশা দিব্বি ঘুম দিচ্ছে। ঝিম মেরে দাঁড়িয়ে রইল নিরব শেখ। সব যেনো তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। খানিক আগেই নিজ হাতে মাইশা কে হ'ত্যা করে নদীতে ফেলে দিয়ে এসেছেন তিনি। মরা মানুষ জ্যান্ত হয় কিভাবে?
নিমিষেই ভয় যেনো তাকে গ্রাস করে ফেলেছে। কাঁপা কাঁপা পদক্ষেপে বিছানার পাশে এসে দাঁড়ান নিরব শেখ। মাইশা ঘুম থেকে জেগে উঠে নিরব শেখের দিকে তাকিয়ে আছে।
"_কী হলো ওখানে দাঁড়িয়ে আছেন যে?
মাইশার কোনো কথা নিরব শেখের কানে পৌঁছাচ্ছে না । মাইশার দিকে বিনয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন তিনি ।
"_তবে কী আমি স্বপ্ন দেখছিলাম?
প্রশ্নের বেড়া জালে আবদ্ধ নিরব শেখ একই অবস্থানে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছেন ।
হঠাৎ নিরব শেখের মা জুলেখা বেগমের চিৎকারে পুরো বাড়িটা উত্তল হয়ে পড়ে। রোহানের ঘরে র'ক্তে'র দাগ ফুটে উঠেছে। রোহান ও নিখোঁজ।
মাইশার ঠোঁটের কোণে পৈচাশিক হাসি নিরব শেখের হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে তুলছে ।
লেখকঃ আরিফ ইসলাম (সংগৃহীত)
0 Comments:
Note: Only a member of this blog may post a comment.